বাংলাদেশে প্রযুক্তির উৎকর্ষ বিকাশে চাই ‘আইসিটি ক্যাডার/সার্ভিসের’ দ্রুত বাস্তবায়ন
বাংলাদেশের যাত্রাপথে প্রযুক্তি এখন শুধু একটি সহায়ক উপকরণ নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও নাগরিক সেবার অন্যতম মূল চালিকা শক্তি। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির (আইসিটি) বিস্তৃত প্রয়োগে আমরা আজ কৃষি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে বাণিজ্য—সব ক্ষেত্রেই নতুন এক যুগে প্রবেশ করেছি। এই অগ্রযাত্রাকে আরও গতিশীল করতে এখন সময় এসেছে ‘আইসিটি ক্যাডার/সার্ভিস’ দ্রুত বাস্তবায়নের।
কেন প্রয়োজন আইসিটি ক্যাডার/সার্ভিস
বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনিক কাঠামোয় দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসন, পুলিশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষায়িত ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে। এসব ক্যাডারের লক্ষ্যই হলো সংশ্লিষ্ট খাতে দক্ষ জনবল তৈরি ও প্রশাসনিক সেবা প্রদান। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, ডেটা গভর্ন্যান্স, সাইবার সিকিউরিটি, ই-গভর্ন্যান্স, ব্লকচেইন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আই) এবং বিগ ডেটা অ্যানালিটিকসের মতো জটিল বিষয়গুলো এখন প্রশাসনের নিত্যপ্রয়োজনীয় অংশ হয়ে উঠেছে।
এ বাস্তবতায় একটি স্বতন্ত্র আইসিটি ক্যাডার বা সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করলে তা শুধু সরকারি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বাড়াবে না, বরং দেশীয় প্রযুক্তি মানবসম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
একটি নিবেদিত আইসিটি ক্যাডার গঠনের মাধ্যমে—
১. সরকারি তথ্য ব্যবস্থাপনা আরও সমন্বিত ও নিরাপদ হবে।
২. প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ডেটা-ড্রিভেন পলিসি চালু হবে।
৩. প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
৪. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের প্রযুক্তি কূটনীতি আরও জোরদার হবে।
উদাহরণ ও তুলনামূলক দৃষ্টান্ত
ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশেই ইতিমধ্যে ডিজিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস বা টেকনোক্র্যাট ক্যাডার চালু হয়েছে। এসব দেশে প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞরা প্রশাসনিক কাঠামোর অংশ হিসেবে কাজ করে জাতীয় পর্যায়ের আইসিটি নীতিমালা বাস্তবায়ন করছেন।
বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা
প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারণ—
আইসিটি ক্যাডারকে ‘প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা’ভিত্তিক একটি প্রশাসনিক সার্ভিস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন প্রযুক্তি ও প্রশাসন উভয় বিষয়ে দক্ষ কর্মকর্তা।
নিয়োগ ও প্রশিক্ষণব্যবস্থা—
বিসিএস পরীক্ষায় আলাদা ‘আইসিটি ক্যাডার’ অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নিয়োগের পর তাঁদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
একীভূত নীতি ও সমন্বয়—
মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে বিদ্যমান আইসিটি কর্মকর্তাদের এই ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে একীভূত প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করা যেতে পারে।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]
প্রণোদনা ও গবেষণা সহায়তা
আইসিটি ক্যাডারের কর্মকর্তারা যেন দেশীয় উদ্ভাবন, স্টার্টআপ ও সরকারি প্রকল্পে নেতৃত্ব দিতে পারেন, সে জন্য বিশেষ প্রণোদনা ও গবেষণা তহবিল থাকা জরুরি।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে প্রশাসনিক দক্ষতা আর প্রযুক্তি জ্ঞান একে অপরের পরিপূরক। বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রাকে টেকসই ও উদ্ভাবননির্ভর করতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট আইসিটি ক্যাডার বা সার্ভিসের দ্রুত বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। এটি শুধু সরকারি সেবার মানোন্নয়ন নয়, বরং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোকে যুগোপযোগী করে তুলবে—একটি স্মার্ট বাংলাদেশের মজবুত ভিত্তি হিসেবে।
লেখক: প্রকৌশলী মো. নাজমুল হুদা মাসুদ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ ও জয়েন্ট সেক্রেটারি (একাডেমিক), বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটি