কন্যাসন্তান

অলংকরণ: আরাফাত করিম

সুপ্তি মন খারাপ করে হাত–পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া জলের হালকা রেখা। অভিমানে সে এতটাই কেঁদেছে যে দুপুরে ভাতও খায়নি। রুমের দরজা লাগিয়ে শুয়ে আছে। মা অনেক চেষ্টা করেও খোলাতে পারেননি সুপ্তিকে দিয়ে দরজা। ক্লাস সেভেনে পড়া সুপ্তি পুকুরে হাত–পা ছড়িয়ে হাপুসহুপুস করে গোসল করতে চেয়েছিল। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় সে এমনভাবে গোসল করেছে পুকুরে। আজ মা তাকে অনুমতি দেননি। গম্ভীর স্বরে বলেছেন, তুমি এখন আর ছোট নও সুপু। বাচ্চাদের মতো জিদ করবে না। পুকুরে যেমন খুশি তেমন নাচবে, আর পাড়ার ছেলেরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে।

সুপ্তি জিদ ধরেছে, কাজ হয়নি। মা অনুমতি দিলেনই না। সুপ্তি অনেক শক্ত কথাও বলেছে মাকে রাগের মাথায়। মা চুপ করে শুনেছেন। মা জানেন, এ বয়সটায় মেয়েরা জিদ আর রেগে গিয়ে অনেক কিছুই বলে। সবটা কানে নিতে নেই। এ জন্য গায়ে হাত তুলে শাসনেরও দরকার নেই। রাগ পড়ে যাবে। তখন মাকে জড়িয়ে ধরে বলবে ‘I love you মা!’

সুপ্তি না খেয়ে থাকায় তার মায়ের মনটা চুপসে গেল। মেয়েটার এত জিদ!

বাবা এসে জিদ ভাঙালেন সুপ্তির। বাবার আদর কোনো মেয়ে কি ফেলতে পারে! মা, বাবা ও সুপ্তি একসঙ্গে খেতে বসল। সিদ্ধান্ত হলো—সবাই একসঙ্গে কক্সবাজার যাবে বেড়াতে। সুপ্তি মনের আনন্দে গোসল করবে। মনের আনন্দে গোসল করা স্বর্গীয় সুখ আনে মনে। সুপ্তির মা খাবার খেতে খেতে বললেন, ‘বুঝলে সুপু, জিদ করলে পুকুরের বদলে সাগর পাওয়া যায়!’ সুপ্তি লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখল। মায়ের দিকে তাকাতে তার লজ্জা লজ্জা লাগল। তার লজ্জাবনত মুখটি ফুটন্ত গোলাপের মতো সুন্দর লাগছিল।

*লেখক: সঞ্জয় দেবনাথ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]