বাবা নিজের সবকিছু উৎসর্গ করে সুখে রাখেন পরিবারকে

১৬ জুন বাবা দিবস। পাঠকের পাঠানো লেখা থেকে বাছাইকৃত লেখা প্রকাশিত হচ্ছে নাগরিক সংবাদে।
লেখকের বাবা
ছবি: সংগৃহীত

বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আদর, স্নেহ, ভালোবাসা, আস্থা, ভরসা, বিশ্বস্ততা ও পরম নির্ভরতার নাম বাবা। বাবার গুরুত্ব সেই সন্তানের কাছে জানুন, যে কখনো বাবার ভালোবাসা পায়নি। আপনি পাল্টাতে পারেন, কিন্তু আপনার বাবার ভালোবাসা কখনোই পাল্টাবে না।

৯ জুন স্ত্রীকে ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর গিয়েছিলাম। ব্যাগগুলো গাড়ি থেকে নামাতেই একটি ছোট ছেলে এসে বলল, স্যার, আমি ব্যাগগুলো ট্রেনে তুলে দিয়ে আসি। ২০ থেকে ৩০ টাকা দিলেই হবে। ছোট ছেলে, তাই আমি আবার স্টেশন থেকে একটা ট্রলিও নিলাম। ছেলেটি ট্রলি নিয়ে যাচ্ছে আর আমি ওর সঙ্গে গল্প করছি। নাম ইয়াসিন, বাড়ি চট্টগ্রামে। ও ট্রেনে করেই কমলাপুর এসেছে। ছেলেটিকে দেখলেই বোঝা যায়, সে কোনো ভালো পরিবারের। সুন্দর, লম্বা-ফরসা গায়ের গড়ন, কিন্তু কাপড় অনেক নোংরা–ময়লা হয়ে ছিল।

জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি স্টেশনে কীভাবে এলে। উত্তরে বলল চলে, এসেছি খিদের জ্বালায়। তোমার মা–বাবা নেই। চুপ থাকে কিছুক্ষণ। সজল চোখে উত্তর, না। কোথায় থাকো, কোথায় ঘুমাও? বলল, এখানেই রাতে ঘুমাই। সারা দিনে ব্যাগ টানাটানি করে যে টাকা পাই, এখানেই বক্সের খাবার কিনে খাই। এমনটা বলতে বলতেই সে অন্য যাত্রীর ব্যাগ নিতে চলে যায়। বাবা থাকলে জীবনটা আরও সুন্দর হতো। এত অবহেলা সইতে হতো না ইয়াসিনের।

গল্পটা বলার উদ্দেশ্য হলো আমাদের যাদের বাবা আছে, যাদের বাবা লালন–পালন করে আজকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন, তবু অনেকেই আমরা আক্ষেপ করি, বাবা আমাকে এটা দেননি, ওটা দেননি। এ রকম হাজারো অভিযোগ আর অভিমানের পসরা সাজিয়ে বসে আছে কত সন্তান।

কখনো কি ভেবেছেন, বাবা না থাকলে আজ আপনি এ পর্যন্ত আসতে পারতেন কি না। আপনি শিক্ষিত, আপনার থাকার জায়গা আছে। আজ আপনি কর্মক্ষম আর সমাজের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শিখেছেন। বাবা না থাকলে হয়তো এভাবে আপনি বড় না–ও হয়ে উঠতে পারতেন। আপনাকে অনেক কষ্টে বেড়ে উঠতে হতো। ভাবুন তো ছেলেটির কথা, সেও তো আজ আপনার মতো বেড়ে উঠতে পারত।

একটি শিশুর জীবনে মা–বাবা উভয়ের উপস্থিতি তাদের সামগ্রিক সুস্থতা ও বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেকেই বাবার আত্মত্যাগ বুঝতে পারেন। আবার অনেকে বাবার এই আত্মত্যাগ বুঝতে পারি না। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে বাবা আমাদের আগলে রাখেন। সন্তানের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না।

বাবা–মায়েরা আমাদের জীবন দেন, আমাদের লালন–পালন করেন, আমাদের শেখান এবং তাঁদের সমগ্র জীবন আমাদের উৎসর্গ করেন। সুতরাং সব সময় আপনার মা–বাবাকে ভালোবাসা ও সম্মান করা উচিত এবং সর্বদা তাঁদের যত্ন নেওয়া উচিত।

স্বভাবগত গাম্ভীর্যের জন্য বাবার সঙ্গে সবার ঘনিষ্ঠতা একটু কম থাকে, কিন্তু আমাদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা কম থাকে না। ছোটবেলার গুটিগুটি পায়ে হাঁটা, তারপর বড় হয়ে যাওয়ার প্রতিটি হোঁচটে যে মানুষটা প্রতিবার সামলে রাখেন, তিনিই হলেন ‘বাবা’।

বাবা—দুই অক্ষরের এই নাম উচ্চারিত হলেই যেকোনো সন্তানের হৃদয়ে জেগে ওঠে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার অনুভূতি। একজন সন্তানের জীবনে বাবার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। বাবা মানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যিনি নিজের সবকিছু উৎসর্গ করে পরিবারকে সুখে রাখেন।

একজন বাবা তাঁর সন্তানের জন্য কতভাবে অবদান রেখে যান, এর হিসাব কেউ কখনো দিতে পারবে না। বাবাকে ভালোবাসুন। আজ হয়তো তাঁর সক্ষমতা আছে, তিনি আপনাকে আগলে রাখছেন, কিন্তু তাঁর দুঃসময়ে আমাদের উচিত তার পাশে থাকা। তাঁর সেবা করা। কারণ, স্বার্থ ছাড়া কেউ যদি আমাদের ভালোবাসেন, তিনি হলেন বাবা।

বাবা হচ্ছেন আমাদের জীবনের বাস্তবিক হিরো, বাবার অপূর্ণতা পৃথিবীর কোনো কিছু দিয়ে পূর্ণ করা যায় না, অনেক অনেক ভালোবাসি বাবা। ভালো থাকুন পৃথিবীর সব বাবা।

 *মো: মোরশেদুল আমিন,  ব্যবস্থাপক, ই-কমার্স, কর্পোরেট সেলস আরএফএল গ্রুপ

*নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]