ময়লা ড্রেনে পড়ে আহত শিক্ষার্থীরা, তোয়াক্কা নেই কারও

রাস্তা সম্প্রসারণ ও পয়োনিষ্কাশনের নামে চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী অঞ্চলের একটি রাস্তার নালার পুনর্খননের কাজ শুরু হয়। লক্ষ্য হলো জনগণের কল্যাণে রাস্তাকে প্রসারিত করা, যা ২০ বর্গফুট প্রশস্ত হবে। এতে জনগণের কল্যাণ হবে ঠিকই, কিন্তু বিলম্বের ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দাকে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

মহানগরীর টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার মূল সড়ক থেকে দারুল ইসলাম ট্রাস্টের দিকে গেলে এই পচা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের দেখা মেলে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) উন্নয়নকাজ শুরুর পর নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এখানকার স্থানীয় বাড়িমালিকেরা রাস্তার জন্য নিজেদের বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে রাস্তা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেন, যা ১২ ফুট থেকে ২০ ফুটের মতো হবে। এ জন্য এই এলাকায় সিটি করপোরেশনও তার কাজ সম্পূর্ণ করতে বিলম্ব করছে।

ড্রেনের কালো, পচা, দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে পড়ে আহত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। নষ্ট হচ্ছে শরীরের কাপড়চোপড় ও পোশাক। গত ছয় মাসে অনেকগুলো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এখানে বসবাসরত কোমলমতি শিশুশিক্ষার্থীসহ পথচারীরা। এ রকম ড্রেনে পড়ার ঘটনা গত ৬ মাসে প্রায় ২০টির মতো ঘটেছে।

দারুল ইসলাম ট্রাস্ট এলাকার বাসিন্দা হাসান আল বান্না। তিনি জানান, তাঁর ছোট্ট ভাগনে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) মাদ্রাসা ছুটির পর বাসায় আসতে গিয়ে সামনের ড্রেনে পড়ে পায়ে ব্যথা পায় সে। তবে এ যাত্রায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে তাঁর ভাগনে। তিনি আরও বলেন, এমন ঘটনা একটি নয়। গত সপ্তাহে একটি প্রতিষ্ঠানের ছোট্ট শিক্ষার্থী বাবার সঙ্গে বাসায় যাওয়ার সময় পা পিছলে ড্রেনে পড়ে যায়। বর্তমানে রাস্তা ও নালাসংস্কারের যে অগ্রগতি, সেটা আগামী দুই-চার মাসেও শেষ হবে কি না, সেটা জানেন না এই বাসিন্দা।

ড্রেনের ওপর স্লাব ও পারাপারের শক্ত কিছু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। আবার পারাপারের জন্য বাঁশের মাচা বিছিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান এখানকার একটি দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। সে জানায়, ১০ সেপ্টেম্বর এক আপু বেলা দুইটার সময় এই রাস্তা ধরে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। ড্রেনের একপাশ থেকে অপর পাশে যাওয়ার জন্য বাঁশের মাচায় উঠতেই সঙ্গে সঙ্গে মাচা ভেঙে ড্রেনে পড়ে যান। হাতে পরীক্ষার ফাইল ছিল। পরে পাশে থাকা এক দোকানদার ও ঝালমুড়ি বিক্রেতা মামা তাঁকে টেনে তোলেন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর (৫৪ নং ওয়ার্ড) বিল্লাল হোসেন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পথচারী ও শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনার সমাধানে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কি না? এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘এটা যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা, তাই বিষয়টি আমার জ্ঞানে রয়েছে। এটি একটি পুরোনো রাস্তা, নতুন করে ২০ ফুট রাস্তা হবে।’

*লেখক: আবদুল্লাহ আল নাঈম, শিক্ষার্থী, উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ