হবিগঞ্জে শিল্পদূষণ ও জনদুর্ভোগ নিরসনে গণশুনানি

হবিগঞ্জে শিল্পদূষণ ও জনদুর্ভোগ নিরসনে করণীয় শীর্ষক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ছবি: লেখক

উন্নয়ন করতে যেমন শিল্পের প্রয়োজন আছে, তেমনি মানুষকে বেঁচে থাকতে কৃষির প্রয়োজন আছে। কৃষির ক্ষতি করে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের আইন মেনে ও পরিবেশ রক্ষা করেই কাজ করতে হবে। দূষণের বিরুদ্ধে কথা বলা সব নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। গত শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জে শিল্পদূষণ ও জনদুর্ভোগ নিরসনে করণীয় শীর্ষক গণশুনানিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এ গণশুনানির আয়োজন করে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ গণশুনানিতে এলাকার জনগণ, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, পরিবেশকর্মী, জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

গণশুনানিতে বক্তারা বলেন, শিল্প যেমন প্রয়োজন, তেমনি কৃষিরও প্রয়োজন আছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাম্প্রতিক কালে কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানা গড়ে উঠেছে। এতে এলাকার কৃষি, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।

হবিগঞ্জের জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন, হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ। এতে সভাপতিত্ব ও পরিচালনা করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলার নেটওয়ার্ক সদস্য খাইরুল হোসেন ও জালাল উদ্দিন রুমি।

বেলার গণশুনানিতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন
ছবি: লেখক

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের শুধু নিজেদের লাভের কথা ভাবলেই হবে না, মানুষের কথা ভাবনায় রেখে শিল্পকারখানাগুলো চালাতে হবে। প্রতিটি কারখানায় ইটিপি থাকতে হবে। আইনের বাইরে কাউকে চলতে দেওয়া হবে না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, এখানে যেভাবে যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, এতে ভবিষ্যতে অনেক বিপর্যয় ডেকে আনবে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অনেক শব্দদূষণ হচ্ছে। কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান মানুষের ক্ষতি করবে, তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নয়ন হবে, তবে পরিবেশ প্রতিবেশ বজায় রেখে। নৈতিকতার দায়বদ্ধতা থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। কারণ, পরিবেশ রক্ষায় সবার দায়িত্ব আছে। ভূমিদস্যুদের সঙ্গে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা কোনো শিল্পের বিরোধিতা করি না। তবে কোনো শিল্প যদি মানুষের নিশ্বাস বন্ধ করে দেয়, তা দেখার দায়িত্ব সবার। এ ক্ষেত্রে জবাবদিহির ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। আইন অমান্য করে কোনো শিল্প গড়ে উঠতে পারে না। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে বৈষম্যহীন আইন প্রয়োগ করতে হবে। শিল্পদূষণে যেসব ক্ষতি হয়েছে, এর নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং এলাকাবাসীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

গণশুনানিতে বেলার সুপারিশমালায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, জরুরি ভিত্তিতে গ্রামাঞ্চল ও জলাভূমিগুলোকে দূষণমুক্ত করা, বিভিন্ন এলাকায় যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সামাজিক ও পরিবেশগত নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাদের প্রত্যেককে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

এ ছাড়া বক্তব্য দেন প্রাণ-আরএফএলের জেনারেল ম্যানেজার হাসান মো. মঞ্জুরুল হক, মার লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সাদিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সহসভাপতি মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল ও তাহমিনা বেগম, বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, সাংবাদিক হাফিজুর রহমান ও শোয়েব চৌধুরী প্রমুখ।