ছবি: লেখক

একটা বুকশেলফ, সেখানে ভর্তি নানা রকমের বই। পাশেই কিছু খালি বক্স রাখা, সেখানে আবার অনেকে প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেটসহ প্লাস্টিক আবর্জনা রাখছেন। বিনিময়ে বিনা মূল্যে একটি করে বই নিয়ে যাচ্ছেন।

ভিন্নধর্মী এই উদ্যোগ শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাশে-আছি ইনিশিয়েটিভ। তাদের এই নতুন ক্যাম্পেইনের নাম তারা দিয়েছে ‘Books for Plastic’। খুব সহজ কাজ, বাসাবাড়ি অথবা চারপাশ থেকে ২৫০ গ্রাম প্লাস্টিক আবর্জনা কুড়িয়ে আনলেই যে কেউ পাচ্ছেন নিজের পছন্দের একটি করে বই। না, অর্থ দিয়ে কেনা যাবে না এসব বই, কেবল প্লাস্টিক আবর্জনার বিনিময়েই মিলবে বই।

পাশে-আছি ইনিশিয়েটিভ তাদের নতুন এই কার্যক্রম শুরু করেছিল মাস দুয়েক আগে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের পাশে। প্রতিবারই অভূতপূর্ব সাড়া পায় তারা, চমৎকার এই উদ্যোগে সহায়তা করে অনেকেই। সরোবরের চারদিকে নানান প্লাস্টিক আবর্জনার সংখ্যাও কমে আসে এই উদ্যোগে। অনেকেই নিজ বাসা থেকে নিয়ে আসেন প্লাস্টিকের বোতল, প্যাকেটসহ আরও নানা ধরনের প্লাস্টিক–বর্জ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি সফল ক্যাম্পেইন হয় শুক্রবার টিএসসিতে।

উদ্যোগকারীরা জানান, তাঁরা প্রতি মাসে অন্তত দুবার করে এই ক্যাম্পেইন আয়োজনের চেষ্টা করছেন। উল্লেখ্য ,গত দুই মাসে মোট পাঁচবার এই ক্যাম্পেইন আয়োজনের মাধ্যমে প্রায় ৫০ কেজি প্লাস্টিক–বর্জ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন তাঁরা এবং ৭৫০টি বই বিতরণ করেছেন এই প্লাস্টিক–বর্জ্যের বিনিময়ে।

শুক্রবারে ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে ঘুরতে আসা অনেকেই প্লাস্টিক আবর্জনার বিনিময়ে বই নিয়ে যান পাশে-আছি ইনিশিয়েটিভের কর্মীদের কাছ থেকে। তাঁদের এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে Garbageman নামের প্রতিষ্ঠানটিও। Books for Plastic থেকে পাওয়া সব প্লাস্টিক আবর্জনা তারা রিসাইকেল করবে, যাতে প্রিয় প্রকৃতি, প্রিয় পরিবেশের একটু হলেও কম ক্ষতি হয়!

প্রসঙ্গত, পাশে-আছি ইনিশিয়েটিভের জন্ম ২০২০ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের কয়েকজন বন্ধু মিলে লকডাউনে হতদরিদ্র মানুষদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটির কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি তাদের নানা উদ্যোগের মাধ্যমে অন্তত ৫ লাখ মানুষকে সাহায্য করেছেন নানাভাবে। পাশে-আছির স্বেচ্ছাসেবক আহমেদ রিফাত কবির তাঁদের এই নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের চারপাশে এত এত প্লাস্টিক আবর্জনা, কিন্তু সেগুলো নিয়ে কাজ করার মানুষ খুবই কম। প্রিয় পরিবেশকে প্লাস্টিকের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই আমাদের এ উদ্যোগ। আশা করছি Books for Plastic-এর মাধ্যমে মানুষ একটু হলেও সচেতন হবে, যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলবে না এবং বেশি বেশি বই পড়বে!’