ক্যাম্পাস আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক

ফাইল ছবি

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাজারো তারুণ্যের স্বপ্নময় মুখ। কিন্তু যদি সে ক্যাম্পাস সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়, তবে তা একটি বিরানভূমিতে পরিণত হতে সময় লাগে না।

চীনের উহানে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক। করোনা সতর্কতা হিসেবে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়। এরপর ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হচ্ছে। এ বছরের ২৩ মে খুলবে। কোনো মিছিল, মিটিং, নির্বাচন, সমাবেশ বন্ধ হয়নি। শিক্ষার্থীরা শুধু করোনায় আক্রান্ত হবে, মিছিল–মিটিংয়ে যারা থাকে, তারা  হবে না?

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ এক বছর হলো। শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে বোরিং সময় কাটাচ্ছে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো মিস করছে। ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে অনেকে। কেউবা শিক্ষাজীবন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।

মানুষের জীবনের মধুর সময় বলা হয় ছাত্রজীবনকে। আর ছাত্রজীবনের সবচেয়ে সেরা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়টাকে। হাজারো শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে অনেক কষ্ট, ত্যাগের পরে অর্জন করে নিতে হয় নিজের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিট। কারও ঠিকানা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কারও ঠিকানা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, কারও ঠিকানা হয় সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা কারও ঠিকানা হয় বঙ্গবন্ধুর পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

ক্যাম্পাসে প্রথম কয়েক দিন ক্লাস করেই তৈরি হয়ে যায় বন্ধুদের এক বিশাল সার্কেল। হঠাৎ করেই কিছু অচেনা-অজানা মুখ হয়ে যায় সবচেয়ে আপনজন। যাদের সঙ্গে কাটে জীবনের অনেক সময়। সুখ–দুঃখের সাথি হয়ে পাশে থাকে তারা। একটি ক্যাম্পাস প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে আবেগ আর ভালোবাসার জায়গা। ক্যাম্পাসজুড়ে থাকে কতশত স্মৃতি আর ভালোবাসা। পড়াশোনা, আড্ডা, গানবাজনা, বন্ধুদের সঙ্গে ঠাট্টা-হাসি, দুষ্টামি আর খুনসুটি। কতশত স্মৃতিবিজড়িত মুহূর্ত আছে ক্যাম্পাসজুড়ে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনজুড়ে আনন্দের সিংহভাগ থাকে ক্যাম্পাসজীবনে। কিন্তু হঠাৎ করোনাভাইরাসের কারণে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। আর সেই আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বস্তরের মানুষের অন্তরে। কোথায় এর শেষ, জানা নেই কারও। আর সেই সঙ্গে বেড়ে চলছে ৫৫ একরের বিস্তৃত প্রিয় ক্যাম্পাসের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রতি মায়া ও ভালোবাসার টান। নিস্তব্ধ পৃথিবীর সবকিছু। নেই কোনো আগের মতো রূপ। সব যেন অচলাবস্থায়। কেমন আছে প্রিয় ক্যাম্পাসটি? এ প্রশ্ন যেন মনের অন্তরালে ঘুরপাক খাচ্ছে বেলা-অবেলায়। প্রিয় ক্যাম্পাসের সব স্মৃতি যেন সবাইকে কাতর করে তুলছে।

মন হারিয়ে যায় ক্যাম্পাসের লেকপাড়, জয়বাংলা চত্বর, ক্যাম্পাসের মাঠের আড্ডায় কিংবা হাফিজ মামার চায়ের দোকানে। এই স্থানগুলোতে এখন তো আর কেউ ভিড় জমান না। ক্যাম্পাসে প্রথমে গিয়ে বন্ধুদের নিয়ে টঙের দোকানে চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠা, আই প্লাস ওয়ান চত্বরে ফুচকা, চটপটি খাওয়া। ক্লাস শেষে লেকপাড়ে বসে, বন্ধুদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝালমুড়ি খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে খেলাধুলায় মেতে উঠে জয়-পরাজয়ের আনন্দ উপভোগ করা। লাইব্রেরিতে সকাল, দুপুর কিংবা সন্ধ্যায় কোনো এক চেয়ারে বসে হারিয়ে যেতাম বইয়ের পৃষ্ঠায়। এখন আর সেই দিনগুলো নেই। নেই মনে শান্তি, শুধু হতাশায় কাটে দিনরাত।

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)
প্রথম আলো ফাইল ছবি

কোভিড-১৯ প্রকোপে পুরো পৃথিবীর সঙ্গে প্রিয় স্বদেশও আজ বিধ্বস্ত। সেই ধারাবাহিকতায় প্রিয় ক্যাম্পাস এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে, চলছে শুধু প্রশাসনিক কাজ। ক্যাম্পাসে কাজ চলায় বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস এক নতুন রূপ ধারণ করেছে। রঙিন ক্যাম্পাস আজ মলিন, প্রাণহীন। প্রিয় বন্ধুরাও বাসায় অলস সময় পার করছে। কেউ আর আড্ডার আসর জমায় না।শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর থাকত গোটা ক্যাম্পাস। মনের আনন্দে ছবি তোলা। শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড় করে বাস ধরার প্রতিযোগিতাটিও এখন আর চোখে পড়ে না। বইয়ের পৃষ্ঠায় হারিয়ে যেতাম অতীতের উদ্ভট কিছু জানতে আর সাফল্য এনে দেবে, এমন প্রত্যাশা থাকে মনে। কিন্তু এখন তো আর এমন হয় না। আজ সব যেন স্মৃতি। ভার্সিটির প্রতিটি আবাসিক হল, মেস যেন আজ কীটপতঙ্গের আবাসস্থল। ধুলাবালুতে একাকার পড়ার টেবিল আর বিছানা। নীরবে মুখর পুরো ক্যাম্পাস। হয়তো ভার্সিটির বাসগুলোর সিটের ওপর পড়ে আছে ধুলাবালুর স্তূপ আর জমে আছে মরীচিকা। তবু ফিরে যেতে চায় এই মন প্রিয় ক্যাম্পসে। আর প্রাণ খুলে বলতে চাই, আসবে কবে ফিরে পৃথিবী আগের রূপে।

সবাই মিস করছে প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোকে। ক্যাম্পাসের কতশত স্মৃতির অন্তরালে রয়েছে কত ভালোবাসা, তা এখন ভাবাচ্ছে। আজ এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কবে খুলবে প্রিয় ক্যাম্পাস? কবে হবে ফিরে যাওয়া সেই চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাসে, কবে আবার পাখির সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুদ্ধস্বর গান, প্রতিযোগিতা, বিতর্ক মঞ্চের যুক্তিনির্ভর বিতর্কে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে দেওয়া শব্দ, কবে আবার সাংবাদিক সেই তরুণেরা মাঠে বিচরণ করবে, কবেই–বা ‘জয় বাংলা’ শব্দে মুখরিত হবে ক্যাম্পাস? আর কবে ফিরবে বশেমুরবিপ্রবির সেই জয় বাংলা চত্বরে?
ক্যাম্পাসে ফিরে আসুক তার প্রিয় চিরচেনা মুখগুলো আবার। জয় বাংলা চত্বর ও হতাশার মোড় আবার একদিন মুখর হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীদের পদচারণে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ও সাদা রঙের বাসগুলো ফিরে পাবে তার হারানো কর্মব্যস্ততা।

এমনই হাজারো প্রশ্নের দানা বেঁধে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর মনে। অপেক্ষা, একদিন সুস্থ পৃথিবীর বুকে ফিরে যাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ সুরের ক্যাম্পাসে। বাসায় থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সবাই। আবার দেখা হবে প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে, নতুন এক সময়ের সঙ্গে, নতুন কোনো পরিবেশে।

লেখক: সিনথিয়া সুমি, শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ