কোমলমতিদের প্রতি সদয় হোন

ফাইল ছবি

একজন মহান ব্যক্তি বলেছিলেন, মানুষের আচরণ আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বের মতো। অর্থাৎ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনি যেই ধরনের অঙ্গভঙ্গি করবেন আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বটিও ঠিক তেমনি অঙ্গভঙ্গি করবে। মূলত আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বটি মানুষের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

পরিবারের ছোট সদস্য বা শিশুরাও আমাদের সেই আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বের মতো। তারাও পরিবারের বড়দের ঠিক একইভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করে যেমনটি আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বটি করে। এখন আমরা ছোটদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ বা ব্যবহার করব, তারাও একসময় ঠিক একই আচরণ বা ব্যবহার করবে তার অগ্রজ বা অনুজদের সঙ্গে! বর্তমান সময়ে প্রায় সময়ই শোনা যায় বাসা-বাড়ি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের ওপর নির্যাতন করার ঘটনা। কখনো পরিবারের বাবা-মা, কখনো স্কুলের স্যার-ম্যাডামদের দ্বারা আবার কখনো মাদ্রাসার শিক্ষক দ্বারা।

নির্যাতন বলতে শুধু ছড়ি দ্বারা আঘাত কিংবা হাত দিয়ে চড়-থাপ্পড়কে বোঝায় না। নির্যাতন বলতে বোঝায় শিশুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার না করা, তাদের কথাবার্তা, কাজকর্ম বা যেকোনো ধরনের কাজকে দৃষ্টিগোচর করা। এতে বাচ্চারা হতাশ হয়, অপরিপক্ব থাকা অবস্থায়ই তারা হেরে যেতে শিখে যায়। তাদের রঙিন জীবনটা হয়ে যায় বিষণ্ন এবং হতাশাগ্রস্ত।

যার ফলে একসময় যখন এসব কোমলমতি শিশু বড় হয়, তখন যে আচরণ তারা তাদের বড়দের থেকে পেয়ে এসেছে, সেই আচরণের পুনরাবৃত্তি করে তাদের অনুজদের সঙ্গে। কখনো কখনো হিতে বিপরীতও হয়। সেই কোমলমতি বাচ্চাগুলো যখন বড় হয় তখন তারা তাদের অগ্রজদের প্রতি ক্ষিপ্র হয় এবং তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করে। আর এসব ঘটনা এখন হরহামেশাই হচ্ছে সমাজে। একটি সভ্য সমাজের পতনের জন্য মাত্র এই একটি কারণই যথেষ্ট।

শিশুরা হচ্ছে একটি গাছের চারার মতো। একটি চারাকে যদি পরিপক্ব বৃক্ষে পরিণত করতে হয় তবে সেই চারাটিকে যত্ন করতে হবে সর্বদা। সঠিক সময়ে পানি, আগাছা পরিষ্কার, পোকা দমন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস-বায়ুর ব্যবস্থা রাখতে হবে। না হয় সেই চারাটি কখনোই পরিপক্ব বৃক্ষে পরিণত হবে না। উল্টো খুব কম সময়েই সেই চারাটি ঝরে যাবে।

ঠিক তেমনি একটি শিশুকে যদি একজন পরিপক্ব মানুষ বা সভ্য মানুষে পরিণত করতে হয় তবে তাকেও পর্যাপ্ত যত্ন করতে হবে, ভালোবাসা আর স্নেহ দিয়ে আগলে রাখতে হবে। ভুল করলে সেটা অতি ভালোবাসা এবং কোমল ভাষায় বুঝিয়ে দিতে হবে। খেলার ছলে শেখানোর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। কখনোই তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ বা মন্দ ব্যবহার করা যাবে না। তাদের গায়ে বেত্রাঘাত বা চড়-থাপ্পড় মারা থেকে বিরত থাকতে হবে।

* লেখক: মুন্সী মুহাম্মদ জুয়েল, দর্শন বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম