স্যার কোন বিষয়ে লিখতে বলতে পারেন, এ বিষয়ের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা। উৎসুক তাদের চোখ-মুখ। আজ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতিতে কখনো তারা পড়েনি। কোন বিষয়ে স্যার লিখতে বলবেন, এ নিয়ে কথা বলছে কেউ কেউ। কেউ বলছে স্যার এই বিষয়ে লিখতে বলবেন, আবার কেউ বলছে স্যার ওই বিষয়ে লিখতে বলবেন! এ নিয়ে তখন তর্কবিতর্ক–হইচই হচ্ছে।
তারপর স্যার বললেন, আমাদের প্রত্যেকের মনে কিছু কষ্ট লুকায়িত থাকে, যা হাসির অন্তরালে চাপা পড়ে। আজ তোমরা নিজেদের সেই দুঃখবোধের কথা লিখবে!
সবাই থমকে গেল! ক্লাসে তখন কোনো হইচই নেই। কেউ কোনো বলছে না। সবাই আনমনে নিজের মনের কষ্টের কথা লিখছে। লিখতে লিখতে কেউ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ল। নির্দিষ্ট সময়ে সবাই লেখা শেষ করে তা জমা দিল স্যারের কাছে। স্যার কাগজগুলো এলোমেলো করে ক্লাসে সবার মধ্যে সেগুলো বিতরণ করলেন। প্রত্যেকের হাতে একটি কাগজ, যাতে দুঃখবোধের কথা লেখা; তবে সেই দুঃখবোধ নিজের নয়, অন্যের। স্যার সবাইকে কাগজ খুলে পড়তে বললেন। সবাই পাঠ করতে শুরু করল, প্রত্যেকের লেখায় ফুটে উঠল নিজের দুঃখের কথা। কারও বাবা হারানোর ব্যথা, কারও মা না থাকার কথা, কারও অপ্রাপ্তির কষ্টের কথা, কারও পরীক্ষায় ফল ভালো না হওয়ায় মন খারাপের কথা, কারও প্রিয়জনকে হারানোর কথা, কারও স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার কথা, কারও জীবনের আকস্মিক ঝড়ের কথা ফুটে উঠেছিল লেখায়। স্যার প্রতিটি কাগজ আবার জমা করে একত্র করতে বললেন।
স্যার বললেন, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই দুঃখবোধ আছে। সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনার সংমিশ্রণেই আমাদের জীবন! কিন্তু সত্যিটা কী, তা জানো? আমরা মনে করি, দুঃখ বুঝি শুধু আমাদের নিজেদের জীবনেই আছে, অন্যদের নেই। অথচ আমাদের সবার মনেই দুঃখ লুকায়িত থাকে। কেউ বুঝতে পারে না! বুঝতে পারে না হাসির আড়ালে কত দুঃখ চাপা পড়ে। আমাদের দুঃখবোধগুলো যখন আমরা একা থাকি, সে সময়ে আমাদের কুরে কুরে খায়! অস্বস্তিকর করে তোলে আমাদের চারপাশ। অথচ আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই দুঃখ আছে। এ কথা বোঝাতেই আজকের এই খেলা। সামান্য মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনেই আমরা ভালো থাকতে পারি! সব দুঃখবোধকে আড়াল করে, মানুষ বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকতে হয়, এটাই আজ তোমাদের উপলব্ধি!
কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন স্যার। সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেজে উঠল বিদায়ের ঘণ্টা!
*লেখক: মো. আবীর আল-নাহিয়ান, আটগ্রাম, জকিগঞ্জ, সিলেট