ইবিতে লাবণ্য স্নিগ্ধ বাদলে ‘চড়ুইভাতি’

সুন্দর প্রকৃতি। বাদলে মাতাল দিন। ঋতুচক্রের হাজিরা খাতায় ক্যাম্পাসের ছুটির দিন। বৃষ্টিস্নাত অনুভূতির জোয়ারে মন কবি-সাহিত্যিক। মধ্যবর্তী আষাঢ়দিনে নানা বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত কজন শিক্ষার্থী। সমগ্র স্নেহে ও অবিরাম ভালোবাসা একত্র, তারা বন্ধু। চতুর্দিক চোখধাঁধানো বৃক্ষ ও বাহারি ফুল। বলছিলাম কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ব্যাচ সমন্বয়কদের ভোজের নিমন্ত্রণের ইতিকথা।

অঝরে বৃষ্টি হয়েছে সারা রাত। সারা দেশে মেঘ থেকে জলের পতন শেষে নিদ্রার অবসান। প্রকৃতি সেজেছে সজীবতায়। মনে ভোরের সূর্যের এক প্রেমময় বার্তা। প্রভাতেই তাড়াতাড়ি করে বাজারে গিয়ে সদাই আনা। ঝাল-লবণের প্যাকেট, কাটা মুরগি, তোড়জোড়ে গোছানো খড়ি, পারিবারিক গণ্ডির বাইরে ছাত্রবয়সে আত্মতৃপ্তি—এরই নাম বুঝি চড়ুইভাতি। এ গল্প চলতে থাক অবিরাম।

ছুটির দিনে ‘চড়ুইভাতি’ কথাটা শুনলেই ধুলো জমানো আগুনের উষ্ণতাময় দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। হইহই-রইরই করতে করতে সারা দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকাল আটটার গাড়িতে ইতিমধ্যে অনেকে চলে এসেছে।

প্রথমেই ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শ্রেণি প্রতিনিধি রানা আহম্মেদ অভির কালিমাখা জার্সির দিকে সবার নজর যায়। ভোর থেকে হাঁড়িপাতিল, কড়াই, শিলপাটা নিয়ে আসতে গিয়ে এ অবস্থা। এ দায়িত্ব তো তারই, কারণ সে প্রধান ব্যাচ সমন্বয়ক। ভোর থেকে তার সহযোদ্ধা লোকপ্রশাসন বিভাগের তৌসিফ তুরান। বাজারের কাজে সাহায্য করতে গিয়ে না খেয়ে অসুস্থ অসুস্থ ভাব। ব্যায়ামাগারে সেই সেজে উপস্থিত ফার্মেসি বিভাগের লাবিব হোসেন ইফতি। মাথায় তার স্পাইক করা। চুলগুলো বাঁকা। আবাসিক হল থেকে ঘুম ভাঙিয়ে এল বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাম্মী। তারপরই এল তার সহপাঠী ফুয়াদ। লোকসাহিত্য বিভাগের অন্যতম বিখ্যাত মানুষ আঁখি, সে কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শাড়ি পরে আসেনি। এ তার প্রথম শাড়ি পরে পর্দাপণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার বায়োমেডিক্যাল বিভাগের ফারজানা ও সৌভিক উপস্থিত। অন্যদিকে, চারুকলা বিভাগের জেবা আফিয়া মৌ আর পরিসংখ্যানের হাসিবুল শান্ত এখন ভালো বন্ধু। তারা দুজন হাঁটতে হাঁটতে ব্যামাগারের দিকে এল। ম্যাচিং ম্যাচিং সবাইকে চমকে দিয়ে লাখের বেশি ফলোয়ার পাওয়া মার্কেটিং বিভাগের তামান্না ও গিটার নিয়ে আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনার মোবারক আশিক চলে এসেছে। প্রফুল্ল মনে আল কোরআন বিভাগের মাহাদী ও মার্কেটিংয়ের সুজন চলে এসেছে। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ফাইরুজ ফাহী ও আফিয়া সুমাইয়া বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে প্রস্ফুটিত মনে উপস্থিত। নতুনদের মধ্যে এসে ভালো লাগছে গণিত বিভাগের আভার। সে কাউকে চেনে না, কিন্তু সবাই তাকে চেনে। কিছুক্ষণ পরে আভার সহপাঠী আতিকও এল। রানার হাঁড়িপাতিলের সঙ্গে বেশ কিছু প্লেট, বালতি ও গামলা যোগ করে আইসিটি বিভাগের রাহিকুল রুহী। পরবর্তী সময়ে এল তার আজকের অতিথি হিমেল, সৈকত আসেন ও লোকপ্রশাসনের আম্রিনা মরিয়মের পক্ষে তার সহপাঠী শোভা ও ইংরেজি বিভাগের ফারহানা। সর্বশেষ আসে মানব উন্নয়ন বিভাগের সজীব ও কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের তাকী। আল হাদিস বিভাগের সাজাদা ইয়ামিন ছিল সবচেয়ে চুপচাপ। সবার সঙ্গে সবচেয়ে মজা করেছে ট্রিপল ‘ই’ (ইইই) বিভাগের তাপসী।

এবার খাবারদাবারের বিশাল নকশা বর্ণনা। সেগুলো কখন শুরু হবে, তা পরে। সবার স্মৃতিতে মনে আসা সাধারণ খাবার খিচুড়ি সঙ্গে মাংস। বিশেষ করে অসাধারণভাবে রুহী ও হিমেলে প্রচেষ্টায় শুরু করা মুরগি ভুনা। বৃষ্টিস্নাত পরিবেশে আগুন জ্বালাতে কষ্ট সহ্য করতে হয় সবাইকে। পাশের দোকানদার মামার লাইটার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়ামাগারের কর্মকর্তাদের সাহায্য না পেলে তা আরও কঠিন হতো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার মনে আগুন জ্বালা দেখে আনন্দ এসেছে। শৈশব-কৈশোরের জীবনের প্রথম অংশ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু। এ বয়সে চড়ুইভাতি একটু আবেগটা অন্য রকম। নেই বড় কোনো রিসোর্ট, বিলাসবহুল বাসে ভ্রমণ তবু তারাই ভালোবাসা, পরিচিত গণ্ডির মানুষ। এ আয়োজনগুলো ছিল নেহাতই বিনোদনের অন্যতম নাম।

মনের অজান্তের সবার জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। বলা যায় ‘গুড ফিলিং’। বলা যায় পিকনিক স্কুলজীবনেই মানানসই। চড়ুইভাতি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভিন্নতর সময় পার করে বন্ধুত্বের রক্তের মধ্যে কিছু ভালোবাসা অধিকার হয়। এ ভালোবাসা বন্ধুত্ব ও মনের জন্য ভালো।

চড়ুইভাতির আয়োজন আর বন্ধুত্বের মিলনমেলা। যা-ই হোক, বলা যায় এটাই পৃথিবীর অনন্য উল্লাস।

*লেখক: রানা আহম্মেদ অভি, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়