জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেক্সিকান ফুলের সৌরভ

ছবি: আল ইসলাম অপু

চোখ বুজে চিন্তা করুন তো, আপনি একটা রাস্তা ধরে হাঁটছেন। যেখানে পথের দুই পাশে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে আর ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি। আঙিনাজুড়ে নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। নাম না–জানা অনেক পাখিও ওড়াউড়ি করছে গাছের ডালে। হেঁটে হেঁটে যত দূর পথ যাচ্ছেন, তত ফুলের ছড়াছড়ি। ভেবে বলুন, তবুও কী মন বিষণ্ন হয়ে থাকবে! এ বর্ণিল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছা করবে!

বসন্তের সকাল। চারদিকে হালকা কুয়াশার মধ্যেই উঁকি দিয়েছে সোনালি সূর্য। মিষ্টি রোদে ঝলমল হয়ে উঠেছে চারপাশ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে যাঁর মতো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছেন। শহীদ মিনার যেতেই চোখে পড়ল ফুলের বাগান! বাহারি রঙের ফুল আর ফুল। ফুলঘেরা মাঠের মাঝখানে শিক্ষার্থীরা কথা বলছেন। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে মুঠোফোনে ফুলের ছবিও তুলতে দেখা গেল। প্রথম দেখায় যে কারও মনে হতে পারে—কোনো ফুলের বাগানে এসে পড়লাম বুঝি! যদিও মুহূর্তেই বিভ্রম কেটে যাবে। ঢাকা জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন পুষ্পশোভিত নান্দনিক ক্যাম্পাস আর চোখে পড়ে না।

বলছিলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। সবুজ প্রকৃতি আর লাল রঙের ইটপাথরে ঘেরা এই বিদ্যাপীঠের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দ্যুতি ছড়াচ্ছে রংবেরঙের কসমস ফুল। নজরকাড়া ফুলের মনমাতানো সৌরভ আর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ সবাই। দেখে মনে হবে এ যেন কসমস ফুলের বিচরণ। লাল, নীল ও হলুদ রঙের কসমস ফুলের সৌন্দর্যে যেন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে জাবি ক্যাম্পাস।
শীতকালে এ বাহারি রং ও রূপের ফুলটির বিস্তার শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, অনুষদ ও অফিস প্রাঙ্গণে দেখতে পাওয়া যায় এই ফুলের গাছ। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙিনায়, এমনকি অনেকের বাগানেও মাথা তুলতে দেখা যায় লিকলিকে সবুজ এ গাছ। এতে নানা রঙের ফুল ফোটে। হলুদ, কমলা, চকলেট, হালকা-গাঢ় গোলাপি ও সাদা রঙের কসমস দেখতে খুবই ভালো লাগে।

সারা বছরই নানা প্রজাতির ফুলে সুশোভিত থাকে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শীতকালে এ সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়। বসন্ত এলে সেই সৌন্দর্য পায় নতুন মাত্রা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অফিস ও রাস্তার পাশে প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে বিচিত্র ধরনের ফুলের বাগান। বাদ যায়নি প্রশাসনিক ভবন, অনুষদ, আবাসিক হল, লাইব্রেরিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্বর। যেখানে শোভা পাচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল। এদের মধ্যে গাঁদা, গোলাপ, কৃষ্ণচূড়া, মুসায়েন্দা, সোনালু, শিমুল, কসমস, রঙ্গন, জবা, ঝাউ, বাগানবিলাস অন্যতম। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছি ও প্রজাপতি। মনে হয়, বসন্ত যেন তার পুরো রং ও রূপ নিয়ে নেমে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসের এ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। মাঝেমধ্যে কেউ সেলফি, কেউ গ্রুপ ছবি এবং কেউবা সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা ফুলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

ছবি: আল ইসলাম অপু

কসমসের বৈজ্ঞানিক নামও Cosmos। রং ও ধরনভেদে নামের ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। যেমন Cosmos sulphureus হলো আমাদের পরিচিত উজ্জ্বল কমলা-হলুদ কসমস। Cosmos bipinnatus হলো সাদা ও গোলাপি কসমস। আর চকলেট রঙের কসমসের নাম Cosmos atrosanguineus। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ প্রজাতির কসমস দেখতে পাওয়া যায় পৃথিবীজুড়ে।

আদি নিবাস মেক্সিকোতে হলেও বাংলাদেশিরা এ ফুলকে আপন করে নিয়েছে, যার কারণে বেশ জনপ্রিয় এই ফুল। এই ফুলের গাছ ৯০ থেকে ১২০ সেন্টিমিটার বড় হয়। ফুল সাদা, লাল বা গোলাপি বর্ণের হয়। সবুজ ক্যাম্পাসের ইটপাথরে গড়া ভবনের সামনে দ্যুতি ছড়াচ্ছে রংবেরঙের কসমস ফুল। নজরকাড়া এ ফুলের মনমাতানো সৌরভ আর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ সবাই। তাই তো শত ব্যস্ততার মধ্যেও সুযোগ পেলেই কসমস ফুলের সৌরভ নিতে ছুটে যান শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকেই। অনেককে আবার সেই ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতেও দেখা যায়। যে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মনের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করে থাকেন ফুলপ্রেমীরা।

কসমসের বীজ দ্রুত ছড়ায় এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই আশপাশের এলাকা দখল করে ফেলতে পারে বলে আমেরিকার কোনো কোনো জায়গায় একে আগাছা হিসেবেও দেখা হয়। কসমস একটি তৃণজাতীয় গাছ। সাধারণত বহুবর্ষজীবী হলেও বাগানে একে চাষ করা হয় একবর্ষজীবী গাছ হিসেবে। আর বাগানে থাকলে এরা নিজেরা তো সৌন্দর্যবর্ধন করেই, তার সঙ্গে সঙ্গে বাগানে ডেকে আনে প্রজাপতি ও মৌমাছি।
বসন্তের আগমনে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি তার জীর্ণতা মুছতে শুরু করেছে। শীতের পাতাঝরা বৃক্ষগুলো এত দিন যেন বিগত যৌবনা বৃদ্ধার মতো দাঁড়িয়ে ছিল রিক্ত বেশে।

ছবি: আল ইসলাম অপু

বসন্ত এসে তাকে দান করেছে যৌবনের উন্মাদনা। মৃতপ্রায় নগ্ন ডালগুলোয় আসতে শুরু করেছে নতুন পাতার আশীর্বাদ। ঋতুর পালাবদলে এবারও বৈচিত্র্যময় ফুলে সেজেছে পুরো ক্যাম্পাস। বসন্তের আগমনে সজীবতা ফিরে পেয়েছে এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। যেদিকে দুই চোখ যায়, সেদিকেই বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা পুরো ক্যাম্পাস। ফুলের বাহারি সৌরভ প্রকৃতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]