ইংরেজি সপ্তাহে বর্ণিল আয়োজন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে
একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মধ্য দিয়ে এক আনন্দমুখর মুহূর্ত উদযাপন করলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নাচ-গান, রম্য বিতর্ক, আবৃত্তি, অভিনয়সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের সৃষ্টিশীল কর্মে নিজেদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর নবীনবরণ ও প্রবীণবিদায়, পুরস্কার বিতরণী ও বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে ইংরেজি সপ্তাহ ২০২৩ উদ্যাপন করা হয়েছে। তপ্ত শরীরকে প্রশান্ত করার জন্য যেমন বৃক্ষতলে অথবা শীতল কোনো স্থানে বসে মনকে পরিশ্রান্ত করতে হয়। ঠিক তেমনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের অতৃপ্ত ও পিয়াসী মনকে শান্ত করতে এবং দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ইংলিশ উইক-২০২৩–এর পর্দা ওঠে। ১৭, ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী ইংরেজি সপ্তাহে ছিল নানা আয়োজনের ঝলকানি। এর আগেই রং–তুলির আঁচড়ে করিডর ও দেয়াল বিভিন্ন চিত্রকর্মের মাধ্যমে রাঙিয়ে তোলেন বিভাগের একঝাঁক তরুণ-তরুণী। ইংরেজি সপ্তাহকে সামনে রেখে নিজেদের অক্লান্ত শ্রম, প্রতিভা ও সৃজনশীল প্রতিভা রাঙিয়ে তোলেন বিভাগের প্রতিটি চত্বর। বিভাগের ক্লাব সংগঠন লিবারেল মাইন্ডসের সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সদস্য ও বিভাগের বিভিন্ন আবর্তনের শিক্ষার্থীরা এতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সপ্তাহের প্রথম দিন ১৭ সেপ্টেম্বর (রোববার) সকালে বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বিশাল এক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। র্যালি শেষে ব্যাডমিন্টন কোর্টে কেক কাটার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ইংরেজি সপ্তাহের উদ্বোধন করেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল। এ সময় সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ১৩তম আবর্তন ও ১৫ আবর্তনের মধ্যকার আন্তব্যাচ ফুটবলের ফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। শ্বাসরুদ্ধকর এ ম্যাচে টাইব্রেকারে বিজয়ী হয় ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা তিনটা থেকে বিভিন্ন ইনডোর গেমসের আয়োজন করা হয়।
এর মধ্যে দাবা, লুডু ও তাস খেলা ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রথম দিন সবচেয়ে প্রাণবন্তকর উৎসব ছিল মেহেদি উৎসব। সিনিয়র জুনিয়রকে, জুনিয়র সিনিয়রকে মেহেদি দিয়ে এক উৎসবের আমেজে রূপদান করেছিল ইংরেজি সপ্তাহের প্রথম দিনটিকে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন (১৮ সেপ্টেম্বর) ক্যারিয়ার সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ জীবনকে কোনদিকে ধাবিত করবেন এবং জীবনে প্রতিটি প্রতিকূল পরিস্থিতির কীভাবে মোকাবিলা করবেন, সে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়। ফ্ল্যাশমভ, পেনাল্টি শট, বস্তা দৌড়সহ বেশ কিছু ইভেন্টে কেটে যায় দ্বিতীয় দিন।
১৯ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ইংরেজি সপ্তাহের শেষ দিনে নবীনদের বরণ ও প্রবীণদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিন রিসার্চ বেজড সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যেখানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুকান্ত ভট্টাচার্য। পরে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শেষে বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইংরেজি সপ্তাহের শেষ হয়। এদিনই বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের বরণ এবং ১০ম ও ১১তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের বিদায় দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যা ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নাচ-গান, রম্য বিতর্ক, আবৃত্তি ও অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের মাতিয়ে দেন। শিক্ষার্থীদের নানা রকম পরিবেশনায় পুরো মুক্তমঞ্চে দর্শকের ঢল নামে। উৎসবের মহাযজ্ঞে মত্ত হন ক্যাম্পাসের সবাই।
ইংরেজি ১১ আবর্তনের বিদায়ী শিক্ষার্থী রাজু বড়ুয়া স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, বিদায় মানে কখনোই তাকে চিরদিনের জন্য ভুলে যাওয়া হয় না, বরং দ্বিতীয়বার মিলিত হওয়ার আগপর্যন্ত ভুলে যাওয়াই বিদায়! একরাশ স্বপ্ন নিয়ে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে আমাদের ব্যাচের যাত্রা শুরু হয়। স্মৃতিপটে জমা হয় অগণিত স্মৃতি! দীর্ঘ এ সময় মনে হচ্ছে, কত তাড়াতাড়িই না শেষ হয়ে গেল! এখন ভাবতেই খারাপ লাগছে যে এই ক্যাম্পাসের প্রাক্তনদের খাতায় আমরাও নাম লিখিয়েছি। প্রিয় বিভাগ জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন করার মাধ্যমে আমাদের বিদায়ের স্মৃতিকে আরও রঙিন করেছে।
ইংরেজি সপ্তাহকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের জীবনে যেন ফিরে এসেছিল নব যৌবন রূপ। যার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তাঁদের সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে। বিচিত্র রঙে-ঢঙে তাঁদের আবেগঘন মুহূর্তগুলো কাটিয়েছেন এ সপ্তাহেই। দিনগুলো তাঁদের স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে আজীবন।
লেখক: মোহাম্মদ রাজীব মিয়া, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়