আমাদের একটা ডিসেম্বর ছিল

শীতের পিঠাছবি: প্রথম আলো

ঘন কুয়াশা আর উত্তুরে হাওয়া জানান দিত প্রকৃতিতে শীতের আগমন। সেই সঙ্গে আমরাও চলতি বছরের পড়ালেখাকে বিদায় জানানোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতাম। নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের শুরুতে আমাদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতো। পরীক্ষা শেষ মানে সকাল-বিকেল প্রাইভেট, ক্লাস ও সন্ধ্যায় পড়তে বসা থেকে ছুটি। সেই ছুটি চলবে নতুন ক্লাসে ওঠার আগপর্যন্ত।

খুব ভোরে ঘুম ভাঙলেও কম্বলের নিচে চুপ মেরে শুয়ে থাকতাম। যেহেতু স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই, তাই আম্মুও ডাকবে না। রান্নাঘর থেকে আসা নানা রকম পিঠাপুলি ও খেজুর রসের ঘ্রাণের লোভ সামলাতে না পেরে উঠতে বাধ্য হতাম। ধোঁয়া ওঠা মজাদার পিঠায় সকালের নাশতা শেষ।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

সকালবেলা কনকনে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে উঠানে বসে রোদ পোহাতাম। কুয়াশা একটু কমে এলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তাম। খেতের আল ধরে ঘাসের ওপর জমা শিশিরের মধ্য দিয়ে হাঁটা শুরু করতাম। দিগন্তবিস্তৃত সোনালি ধান ও রংবেরঙের শাকসবজির মাঠ। ছেলেরা সামনের ঈদের জন্য টাকা জমানোর উদ্দেশ্যে চুক্তিতে কৃষকদের ধান কেটে দিত।

বাড়িতে বাড়িতে চলত ধান মাড়াইয়ের কাজ। বড়দের থেকে চাঁদা তুলে ও বাড়ি থেকে চাল, ডাল, তেল, মসলা ভাগাভাগি করে এনে ইট দিয়ে চুলা বানিয়ে চড়ুইভাতির আয়োজন করতাম। বিকেলের সময়টাতে ক্রিকেট, ফুটবল খেলার মাঠ জমে উঠত। সন্ধ্যায় সবাই মিলে গ্রামের রাস্তা ধরে হেঁটে বাজারে হতো। নানা রকম খাবার খেতাম। রাতে বাড়ি ফিরে খড়ের স্তূপে লুকোচুরি খেলতাম। রাতে ব্যাডমিন্টন খেলা ও খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহানো। খালাতো ভাইবোন সবাই মিলে মামাবাড়িতে বেড়াতে যেতাম। চাঁদের আলোয়  গল্পের আসর বসত। সবাই মিলে কত মজা করতাম। বাড়ির সবাই মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতাম। শীতের সময় গ্রামগুলোয় বিয়ের ধুম পড়ত। চাইলেও ফিরে যেতে পারব না ছোটবেলার দিনগুলোয়। এখন সবই শুধু স্মৃতি।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

এ যুগের ছেলেমেয়ের কাছে মনে হতে পারে এটি কোনো রূপকথার গল্প। কারণ, গ্রামগুলোয় আগের মতো পিঠাপুলি তৈরির ধুম এখন যেন একটু কম। গ্রামগুলোয় নগরায়ণ হয়েছে। প্রযুক্তি এসেছে হাতের মুঠোয়। আলোকিত হয়েছে পথঘাট। মানুষ হয়ে উঠেছে ঘরবন্দী।

লেখক: ফরহাদ হোসেন, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।