কবি বিমল গুহের ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে ‘ধলপ্রহরের আলো’ গ্রন্থের উন্মোচন

রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে কবি বিমল গুহের ৭০তম জন্মবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে টাঙ্গন প্রকাশনী।

রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে কবি বিমল গুহের ৭০তম জন্মবার্ষিকী পালনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে টাঙ্গন প্রকাশনী। গত শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলের এ অনুষ্ঠানের কবি বিমল গুহের আত্মজীবনী ‘ধলপ্রহরের আলো’ গ্রন্থের উন্মোচন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালনক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন কবি কামাল চৌধুরী, নাসির আহমেদ, আসাদ মান্নান ও মিনার মনসুর।

মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘বিমল, আপনি যে ছন্দকে খাটো করে দেখেননি, বুঝেছেন কবিতার অন্তর্গত শক্তি; বুঝবেন আপনার ভবিষ্য–সাফল্য এ উপলব্ধির কাছে অনেকটাই ঋণী। এ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন কবি সিকদার আমিনুল হক। আজকের ৭০ বছরে পদার্পণ করা যে কবি বিমলকে আমরা দেখলাম, তাঁর ভেতর এ কথার পুনর্ব্যক্ত হতে অভিভূত। বিমল গুহর চরণমালার প্রধান অহংকার অক্ষরবৃত্ত। বস্তুত আবহমান বাংলা কবিতাও এ পথেই এগিয়েছে।’

কবি কামাল চৌধুরী বলেন, ‘বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমানের কাব্য আলোচনায় তা চমৎকার আলোচনা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বিমলের কাব্যে যে অবয়ব, তা দাঁড়িয়েছে, এটা বলতে দ্বিধা নেই। আর এই যে তাঁর ৭০তম জন্মদিন, দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি যে কাজটা করেছেন, তা অসাধারণ। এই দিনে তিনি আমাদের তাঁর আত্মজীবনী “ধলপ্রহরের আলো” উপহার দিয়েছেন। এ গ্রন্থের যতটুকু পড়েছি, এটা স্মৃতিকথা ও আত্মজীবনীর সমন্বয়। তবে এ গ্রন্থের মধ্য দিয়ে আমার অনেক স্মৃতি পুনরায় ফিরে এসেছে। তিনি যেভাবে সন, তারিখ উল্লেখ করেছেন, তাতে পরবর্তী সময়ে আমাদের আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা লেখায় খুবই কাজে দেবে। আর কবিদের স্মৃতিকথা লিখলে একটা সুবিধা আছে।’

কবি নাসির আহমেদ বলেন, ‘কবি বিমলের গোছানো ও পরিপাটি জীবন। তাঁর আত্মজীবনী “ধলপ্রহরের আলো” পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। মুগ্ধ হওয়ার দুটি কারণ। অনেক সময় আমরা নিজের আত্মজীবনী লিখতে গিয়ে নিজের কথা এতটাই বেশি করে বলি এবং নিজেকে এতটাই বড় করতে চাই, ফলে আত্মজীবনীর যে মহিমা ও সৌন্দর্য, সেটা বিঘ্নিত হয়। বিমলের আত্মজীবনের সময়, যেটা আমারই সময়। যে সময়টাকে তিনি ধরেছেন, সেটা হচ্ছে পঞ্চাশের দশকের শৈশবের মধ্যভাগ। এ ছাড়া তাঁর পরিবারের যে বর্ণনা, দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষপীড়িত এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা নানাভাবে তুলে ধরেছেন।’

কবি মিনার মনসুর বলেন, ‘আজকের এই অনুষ্ঠানে আমার মনে হয়েছে যে আমাদের যে বইকেন্দ্রিক আলোচনা, এগুলো আরও বেশি হওয়া দরকার। বড় বড় হল ভাড়া না করে ২০ বা ৩০ জন মিলে হলেও বইকেন্দ্রিক আলোচনাগুলো করা দরকার। কারণ, বই থেকে নানা কারণে দূরে সরে যাচ্ছি আমরা। সেই দিক থেকে এই বইয়ের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি আর যে মানুষটি কবিতা নিয়ে ৭০ বছর জীবন পার করছেন, সেটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিমলদা এমন একজন মানুষ, আমরা তাঁর ৭০ বর্ষ উদ্‌যাপন করছি। সেই জীবনটার দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখব, বিমলদার পরিপাটি ও অসাধারণ একটা জীবন। এ রকম জীবন খুবই কম মানুষের আছে, এমনকি পৃথিবীতে এ রকম মানুষ খুব কম পাওয়া যায়।’

এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন কবি ফারুক মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান, কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু ও টাঙ্গন প্রকাশনের প্রকাশক ও গবেষক অজয় কুমার রায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রূপা চক্রবর্তী।