ফরিদুর রেজা সাগর: বাংলা ভাষার টেলিভিশন মাধ্যমের বাণিজ্যিক উৎকর্ষের পথিকৃৎ
ফরিদুর রেজা সাগর। বৈচিত্র্যময় পরিচয়ে বর্ণিল ব্যক্তিত্ব। ঔপন্যাসিক রাবেয়া খাতুনের ছেলে, শিশুসাহিত্যিক, বাংলা ভাষার টেলিভিশনে অসংখ্য নতুন ও ভিন্নমাত্রার অনুষ্ঠান নির্মাণের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা, সফল ব্যবসায়ী। এসব পরিচয় যে মাধ্যমে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়েছে, তার নাম টেলিভিশন। বাংলা ভাষার বেসরকারি টেলিভিশনকে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক করার মাধ্যমে টেকসই করতে তিনি যে সৃষ্টিশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, এক কথায় অনন্য।
ফরিদুর রেজা সাগরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’ যাত্রা শুরু করে ১৯৯৯ সালে। এই চ্যানেলের যাত্রা শুরুর আগে বাংলাদেশের মানুষ টেলিভিশন বলতে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও সদ্য চালু হওয়া এটিএন বাংলাকে বুঝত। টেলিভিশনে আয়ের একমাত্র উৎস ছিল বিজ্ঞাপন। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি আয় বাড়াতে বিষয়ে বৈচিত্র্যে এত ধরনের বাণিজ্যিক আঙ্গিক ব্যবহার করা যায়, ফরিদুর রেজা সাগরের আগে কেউ ভাবেনি। বর্তমানে টেলিভিশনে পপআপ, ডগি, ক্লক, স্ক্রল, সিজিসহ নানা ধরনের বিজ্ঞাপন কাঠামোর ধারণা, টেলিভিশন কাঠামোয় ইভেন্ট আয়োজন—সবই সাগরের সৃষ্টিশীলতার চমক।
বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনের কনজিউমারিজম বা কমোডিফিকেশন নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা আছে। ফরিদুর রেজা সাগরের সৃষ্টিশীল বাণিজ্যিক ভাবনাও আলোচনা–সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তবে সত্যিটুকু হলো, বাংলাদেশের কোনো টেলিভিশন উদ্যোক্তা তাঁর ধারণাগুলোকে উপেক্ষা করতে পারেননি। বাংলাদেশে চলমান প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্ক্রিন তার প্রমাণ। তাঁর দেখানো পথেই প্রতিটি চ্যানেল নিজেদের বাণিজ্যিকভাবে টিকিয়ে রেখেছে। পুরো টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক রূপরেখায় সাগরের সৃষ্টিশীল অবকাঠামোর ওপরে দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে টেকসই করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবে দৃশ্যমান মাধ্যমে দ্রুতগতির পরিবর্তন লক্ষণীয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে টেলিভিশন মাধ্যমে। তবে ডিজিটাল মাধ্যমে কনটেন্ট বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও সাগর মডেলই এখন পর্যন্ত অগ্রগণ্য। এ কারণে নিঃসন্দেহে বলা যায়, ফরিদর রেজা সাগর বাংলা ভাষার টেলিভিশন মাধ্যমের ব্র্যান্ড ও বিজ্ঞাপন অবকাঠামোর টেকসই বিনির্মাণের পথিকৃৎ। বাংলাদেশি এ অনন্য টেলিভিশন ব্যক্তিত্বের জন্মদিন আগামীকাল ২২ ফেব্রুয়ারি। শুভ জন্মদিন, ফরিদুর রেজা সাগর।
*লেখক: মাশরুর শাকিল লেখক ও সাংবাদিক
**নাগরিক সংবাদে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]