মোহনগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ও আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যেমন

নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়’। মরহুম খান সাহেব আবদুল আজিজ আহম্মদ নিজের জন্মস্থান পৈতৃক ভিটাবাড়ি দান করে ১৯৩১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী, প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী ও সামাজিক জাগরণের অগ্রদূত। শুরুতে বিদ্যালয়টির নাম ছিল ‘মোহনগঞ্জ হাইস্কুল’। বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন জহুর উদ্দিন মাস্টার। বেসরকারি অবস্থায় ১৯৪৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন আবদুল আজিজ তালুকদার, মমতাজ উদ্দিন আহম্মদ, আবুল হোসেন শেখ, হাছেন আলী আহম্মদ, আবদুল হাই তালুকদার, ডা. বদর উদ্দিন আহম্মদ, ডা. বিধুভূষণ চৌধুরী, রামচন্দ্র চক্রবর্তী, মহর আলী চৌধুরী, এ কে এম কেরামত আলী, নজু তালুকদার, ডা. আখলাকুল হোসাইন আহম্মদ, আবুল ফজল তালুকদার ও আবদুর রাজ্জাক মাস্টার।

১৯৩৫ সালে প্রথমবারের মতো কয়েকজন শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয় থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রতিবছরই এই বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে আসছেন। এরই ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাবিদ ড. ডি বি স্মিথ বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। তাঁরই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালে প্রথম দফায় যে পাঁচ বিদ্যালয়কে যুক্তরাষ্ট্রের পাইলট স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, এর একটি হলো ‘মোহনগঞ্জ হাইস্কুল’। এই অসামান্য সাফল্য অর্জিত হয়েছিল তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শামছুল হক ও সভাপতি আবদুল আজিজ আহাম্মদের প্রচেষ্টায়। ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৮১ সালে ‘মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়’ নামে জাতীয়করণ হয়।

মোহনগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আমার খুবই প্রিয়। মায়ের চাকরিসূত্রে ছোটবেলা থেকেই এই বিদ্যালয়ে যাওয়া–আসা। বর্তমানে আমি এই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমাদের বিদ্যালয়টি অবকাঠামোগত দিক থেকে অনেক সুন্দর। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের জন্য একটি ডরমিটরি ভবন, একটি ছয়তলা ভবনসহ সাতটি ভবন রয়েছে। নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানের অবদানে বিদ্যালয়টিতে ২০১৭ সালে ‘দ্বিতীয় শিফট’ চালু হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বিদ্যালয়ের তিনজন প্রাক্তন ছাত্র শহীদ হন। তাঁরা হলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফজলুর রহমান, স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ দবির উদ্দিন আহম্মেদ ও আনোয়ারুল আলম খান চৌধুরী কামাল। এই তিন শহীদের স্মরণে সাজ্জাদুল হাসান এই বিদ্যালয়ে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন। এ ছাড়া আমাদের বিদ্যালয়ের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীরা উপজেলা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়েও পুরস্কৃত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মমিন, বাংলাদেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. ফজলুর রহমান চৌধুরী, নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, অধ্যাপক আবদুর মতিন, কানাডায় অবস্থানরত কৃষিবিদ ইন্দ্রজিত রায়সহ অগণিত শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। সংক্ষেপে এই বিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃতী শিক্ষার্থীদের কথা লিখে শেষ করা যাবে না।

এ ছাড়া আমাদের বিদ্যালয় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে। আর শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হলাম আমি নিজেই। আমি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে পুরস্কার পাওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে আমিও গর্ব বোধ করি।

লেখক: সম্পূর্ণা পণ্ডিত, শিক্ষার্থী, শ্রেণি: নবম, রোল নং: ১, শাখা: ক, শিফট: দিবা, মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা।