ঢাকাই ছবির কামাল পারভেজ, পর্দার পেছনে এক সফল ব্যক্তিত্ব
সম্প্রতি চলচ্চিত্র প্রযোজক ও অভিনেতা কামাল পারভেজ একটা বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি নায়ক সোহেল রানা ও নায়ক রুবেলের ভাই। তাঁরা তিনজন বাংলা চলচ্চিত্রে আপন মহিমায় উজ্জ্বল। কামাল পারভেজের মুখটি দর্শকদের কাছে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত হলেও তিনি কম কিসে? অভিনয় কম করলেও তিনি বেশ কিছু সফল সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। কামাল পারভেজ বাংলাদেশের প্রযোজকদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন। আর মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা প্রযোজক-পরিচালক হয়ে সিনেমায় এলেও পরে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তিনি ঢাকাই ছবির অন্যতম সেরা নায়ক হয়ে যান। নায়ক সোহেল রানা ড্যাশিং হিরো এবং নায়ক রুবেল অ্যাকশন কিং হিরো হিসেবে সুপরিচিতি পেয়েছেন। নায়ক সোহেল রানা ও প্রযোজক কামাল পারভেজ বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
কামাল পারভেজ জনপ্রিয় অভিনেতা না হলেও মাসুদ পারভেজ ক্ল্যাসিক সিনেমা ‘জীবন নৌকা’য় অভিনয় দিয়ে অনেক প্রশংসা পেয়েছেন। নায়ক সোহেল রানা ও সুচরিতার সঙ্গে এই ছবিতে কামাল পারভেজের অভিনয় ছিল নজরকাড়া। তিনি প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্রে আসার পূর্বেই অভিনেতা হয়েছেন। ‘জীবন নৌকা’র পরে তিনি আর অভিনয় করেননি। তবে ‘বীর পুরুষ’ ছবিতে দর্শকেরা কামাল পারভেজকে আবারও পেয়েছিল। ব্লকবাস্টার ‘বীরপুরুষ’ ছবিতে ঢালিউডে প্রথমবারের মতো তিন ভাইয়ের (সোহেল রানা, রুবেল, কামাল পারভেজ) পর্দায় উপস্থিতি ছিল। এ ছাড়া এই মুভিতে বীরপুরুষ সোহেল রানাকে পরামর্শ দানকারী হিসেবে অভিনয় করেন কামাল পারভেজ। ঠিক যেমনটি মাসুদ রানাকে তথ্য ও পরামর্শ দেন মেজর রাহাত। এখানে গল্পের প্রয়োজনে সোহেল রানাকে যদি মাসুদ রানা ধরি, তবে নিশ্চিত বলতে পারি কামাল পারভেজ মেজর রাহাতের ভূমিকায় ছিলেন। মজার বিষয় হলো এই তিন ভাইকেও আর কখনো একসঙ্গে এক সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়নি। তবে কামাল পারভেজ প্রযোজিত শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘শত্রু ভয়ঙ্কর’, ‘টপ রংবাজ’ ছবিতে সোহেল রানা ও রুবেল একত্রে অভিনয় করেছেন। আর কামাল পারভেজ অভিনয় প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও জায়গা করে নেন সিনেমায় পর্দার পেছনের কারিগর হিসেবে। কামাল পারভেজের ছেলে আকিব পারভেজ চলচ্চিত্র পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছেন।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
কামাল পারভেজ ঢাকাই সিনেমার সফল প্রযোজকদের মধ্যে অন্যতম। কামাল পারভেজ প্রযোজিত প্রথম সিনেমা ‘শরীফ বদমাশ’। কামাল পারভেজ প্রযোজিত শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘বীরপুরুষ’ ১৯৮৮ সালে শুধু বর্ষসেরা ছবিই নয়, বরং সেই সময় বেশ কয়েক বছর সিনেমার ব্যবসার রেকর্ড ব্রেক করে। এ ছাড়া কামাল পারভেজ প্রযোজিত ‘হাইজ্যাক’, ‘আমি শাহেনশাহ’, ‘শত্রু ভয়ঙ্কর’, ‘টপ রংবাজ’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘খুনের পরিণাম’সহ আরও চলচ্চিত্র হিট-সুপারহিটের তালিকায় রয়েছে।
কামাল পারভেজ রুচিশীল প্রযোজক ছিলেন। ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ছবির নান্দনিকতা দেখলেই বোঝা যায়। তাঁর সিনেমাগুলো ছিল অ্যাকশননির্ভর। বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্রের ক্রান্তিকালে কামাল পারভেজের মতো প্রযোজকের প্রয়োজন।
ঢাকাই ছবির তিন পারভেজ ভ্রাতার মিথস্ক্রিয়ায় দর্শক পেয়েছেন বাণিজ্যিক ধারার সুস্থ ছবি। তাঁরা তিন ভাই একসঙ্গে অথবা আলাদাভাবে চেষ্টা করেছেন দর্শকদের চাহিদা পূরণ করতে। যত দিন দেশীয় চলচ্চিত্র থাকবে, তত দিন তাঁদের নাম এবং বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে তাঁদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর পারভেজ ভ্রাতাত্রয়ী থাকবেন সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
লেখক: ব্যাংকার, মোহাম্মদপুর, ঢাকা