মা, তুমি আমাকে দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে বাঁচার স্বপ্নও দেখিয়েছ

মায়ের সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

চিঠির শুরুতে আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা নিয়ো। আশা করি, খুব ভালোই আছ। আজ খুব আনন্দ লাগছে যে জীবনের প্রথম চিঠি তোমাকেই লিখছি। পৃথিবীতে তুমি আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল ও নিরাপদের জায়গা। আমাদের পরিবারের স্থপতি মা তুমিই, কারণ তোমার চাকরির উপার্জনের অর্থ দিয়ে আমরা তিন ভাই লেখাপড়া করে একটা জায়গায় দাঁড়াতে পেরেছি।

কোষের বিভাজনের মাধ্যমে মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারে, কিন্তু জ্ঞানে বিকশিত মানুষ হওয়ার জন্য চাই শিক্ষা। বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়ের প্রথম ব্যক্তি তুমি। মা, তোমার একটা উপদেশ আমার কানে ভাসে। তুমি বলেছিলে, ‘বাবা, জীবনে একটা কথা মনে রাখবে সব সময়, সত্য পথে থাকবে এবং সত্যকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করবে।’

মা, তোমার কথা আমার কাছে মহান বাণী হিসেবে থাকবে, কারণ ‘জান ও জবাবের স্বাধীনতা’ রাষ্ট্রের কাছে চেয়ে তো পবিত্র কালি ও কলম হাতে ধরেছি সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের সত্য কথা তুলে ধরতে এবং পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি সাংবাদিকতা। মা, তোমার হাতের রান্না খুবই মনে হয়। বিশেষ করে তোমার হাতের পিঠা, যা আমার সবচেয়ে প্রিয় খাবার।
যখন সারা বিশ্বে মানুষ করোনাভাইরাসের আক্রমণে টালমাটাল, তখন আমাদের দেশেও ব্যতিক্রম নয়। কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে। করোনায় মানুষ ভেতর চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে, ঠিক তখনই সর্দি, জ্বর ও প্রচণ্ড মাথাব্যথায় নাজেহাল হয়েছিলাম। জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করতে গিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে নমুনা নিয়েছিল, কিন্তু ফলাফল দুই দিন পর জানাবে। মেসে এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমাকে একঘরে করে রাখা হয়। কেউ কাছে আসে না। দূর থেকে ওরা নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করেছিল, করোনা রোগীর কাছে যাওয়া যাবে না। কেউ ওষুধ পর্যন্ত এনে দেয়নি। পরদিন আমি বাড়িতে চলে আসি।

বাড়িতে এসে নিজেকে সব সময় একা রাখার চেষ্টা করেছিলাম। তুমি আমার অবস্থা বুঝতে পেরেছ। তাই তো আমাকে সব সময় মনের মধ্যে সাহস জুগিয়েছিলে, একা থাকতে দাওনি। মা, তোমার স্নেহ–ভালোবাসার বন্ধন দিয়ে আমাকে বুঝি পৃথিবীতে ঠিকে থাকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। রাতে গভীরে যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তখনই তুমি আমার জন্য পানি গরম করে আমাকে দিয়েছ। ওষুধ দিয়েছ, শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়েছি আর তোমার ভালোবাসা পেয়ে সত্যি অবাক হয়েছি। পৃথিবীতে সবাই ছেড়ে গেলেও মা নিজের জীবন উৎসর্গ করে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখে—তার প্রমাণ তুমি নিজেই। তুমি আমাকে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছ আবার দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে বাঁচার স্বপ্নও দেখিয়েছ। তোমার দেওয়া উপহারের বইগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে থাকবে। ভালো থেকো, মা।