নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ঐতিহ্য রক্ষায় অনন্য প্রয়াস

যাত্রাপালায় শিক্ষকেরা
ছবি: সংগৃহীত

একসময় বাংলাদেশে যাত্রাপালা অনেক জনপ্রিয় ছিল। রচিত হয়েছিল নানা রূপকল্প। রাতের পর রাত জেগে মানুষ বিভিন্ন যাত্রাপালা দেখেছে। আলিবাবা, রূপবান, বেদের মেয়ে জোছনা, সোহরাব-রোস্তম, সিঁদুর নিয়ো না মুছে, গরিবের মেয়ে, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা—এ রকম বহু যাত্রাপালা দেখার জন্য যাত্রাপাগল মানুষ ছুটে যেত যাত্রা দেখতে। যাত্রাপালা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগের মতো কৌতূহল এখন তেমন একটা নেই। গ্রামগঞ্জে যাত্রা প্রদর্শিত হওয়ার কথা আজকাল খুব একটা শোনাও যায় না। দিন যতই যাচ্ছে, মনে হয় যাত্রাপালা লুপ্ত হতে চলেছে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের যাত্রা নিয়ে তেমন একটা কৌতূহলও দেখা যায় না। যুগ পাল্টে যাওয়ার কারণেই হয়তো যাত্রার আজ করুণ পরিণতি।

একইভাবে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে আমরা সম্মান দিয়েছি সত্যি, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিভান্ডার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি যে বৈচিত্র্য এবং বিপুল রচনাসম্ভার নিয়ে বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছিলেন, তার অনেক কিছুই আজও লোকচক্ষুর অন্তরালে। বালক বয়সে কবি নজরুল ছিলেন লেটো দলের সর্দার। নাটক রচনার মাধ্যমেই মূলত তাঁর বিস্ময়কর, সৃষ্টিশীল জীবনের যাত্রা। ঠিক এ কারণেই নজরুলের সাহিত্যকর্ম থেকে ‘বিদ্যাপতি’ নাটকটি বেছে নিয়ে এবং সেই সঙ্গে যাত্রাপালা, যেটি আরেকটি ঐতিহ্যবাহী আঙ্গিক, যেটির প্রচলন ও চর্চা অনেকাংশেই কম, সেটিকেও এর সঙ্গে যুক্ত করে কাজী নজরুলের নাটক অবলম্বন করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলজয়ন্তীতে যাত্রাপালা ‘অনুরাধা’ মঞ্চস্থ করা হয়েছে।

যাত্রাপালায় শিক্ষকেরা
ছবি: সংগৃহীত

যাত্রাপালাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তন্বী সাহা ও বিদ্যাপতি ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনোজ কুমার প্রামাণিক। যাত্রাপালাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিভাগের ২৫ জন শিক্ষার্থী অভিনয়ে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেন জাহিদুল কবীর, উজ্জ্বল কুমার প্রধান, সোহেল রানা, মাসুম হাওলাদার, তুহিন অবন্ত, কল্যানাংশু নাহা, মাহমুদুল হক, আসিফ ইকবাল আরিফ প্রমুখ।

যাত্রাপালায় শিক্ষকেরা
ছবি: সংগৃহীত

যাত্রাপালার নির্দেশনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক হীরক মুশফিক। কথা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা ও এর বিকাশ খুবই প্রয়োজনীয়। সেই প্রয়োজনীয়তার জায়গা থেকেই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিমনা শিক্ষকদের বিশেষ আগ্রহে এবং উপাচার্য মহোদয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ আয়োজন। কাজী নজরুল এবং তাঁর সঙ্গে খুবই ঐতিহ্যবাহী একটি আঙ্গিক যাত্রাপালা। দুটোকে একসঙ্গে সমন্বয় করতে চেয়েছি। ঠিক সে কারণেই নজরুলের সাহিত্যকর্ম থেকে “বিদ্যাপতি” নাটকটি বেছে নিয়েছি। সেই সঙ্গে যাত্রাপালাটি আমাদের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী আঙ্গিক, যেটির প্রচলন ও চর্চা অনেকাংশেই কম, সেটিকেও আমরা এর সঙ্গে যুক্ত করে নজরুলের নাটক অবলম্বন করে যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করেছি।’

যাত্রাপালাটি দর্শকসারিতে বসে উপভোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর।

*লেখক: আশিকুর রহমান সৈকত, শিক্ষার্থী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

**নাগরিকের লেখা ও ছবি পাঠাতে পারবেন [email protected]