রংপুরে কমিউনিটি লাইব্রেরি ও স্কুল নির্মাণে বাধা, কেটে যাক সমস্যা

ফাইল ছবি

পৃথিবীর খ্যাতিমান মনীষীদের মতে, ‘পাঠাগার শুধু বইয়ের সংগ্রহশালা নয়, বরং তা মানবসভ্যতার শত শত বছরের ইতিহাসের হৃদয়স্পন্দন।’ অর্থাৎ পাঠাগার সমগ্র বিশ্বপরিমণ্ডলের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও ইতিহাসের ধারক, বাহক, সংগ্রহ ও সংরক্ষণশালা। জ্ঞানচর্চার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানের বিকাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পাঠাগারের ভূমিকা কম নয়। এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘পাঠাগার’ নির্মাণে বাধা প্রদানের সংবাদ জেনে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা নানা সূত্রে জানতে পেরেছি, রংপুরে কমিউনিটি লাইব্রেরি ও স্কুল নির্মাণে অনেকে বাধা দিচ্ছেন।

আমরা অবগত হয়েছি, কবি ও সমাজকর্মী মীর রবির দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় উপজেলার অন্নদানগর শরলার বিল আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি কমিউনিটি লাইব্রেরি ও স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় পাঠাগারের ঘর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। কাজ চলার সময় বিতর্কিত কিছু ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে মবের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কাজটি বন্ধ করতে বাধ্য করায়। একই সঙ্গে কবি ও সমাজকর্মী মীর রবিকেও আপত্তিকর ট্যাগে আখ্যা দেওয়া হয়। নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে তাকে হুমকি দিয়ে আসছে বলে আমরা জেনেছি, যা এ দেশের গ্রামীণ সমাজ-সংস্কৃতির উন্নয়নে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষের জন্য অশনিসংকেত। ফলে নির্মাণাধীন কমিউনিটি লাইব্রেরি ও স্কুলের কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। যদি এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হয় কিংবা তা বাতিল হয়, তাহলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৫০ ভূমিহীন পরিবারের শিশু-কিশোরেরা উন্মুক্ত শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হবে, যা সমাজে বৈষম্যের শিকার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জ্ঞানচর্চা ও সাংস্কৃতিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। আমরা মনে করি, আধিপত্যবাদমুক্ত বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এমন ঘটনা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং এই অপচেষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে অবিলম্বে কমিউনিটি লাইব্রেরি ও স্কুলের কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি।

‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

কমিউনিটি লাইব্রেরি ও স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা মীর রবি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশু-কিশোরদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য আমি দীর্ঘদিন কাজ করে আসছি। পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে এর বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলাম আমরা। সে সময় তা সম্ভব না হলেও, গণ–অভ্যুত্থান আমাদের জন্য সেই পথকে প্রশস্ত করে দেয়। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা এর নির্মাণকাজ শুরু করি। কিন্তু সম্প্রতি কাজ চলমান অবস্থায় অনেকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে সব মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

*লেখক: নূর এ আজম দ্বীপু, কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী