এস এম সুলতানের রংতুলি

শুধু রংতুলি নয়, বাঁশি হাতেও দারুণ পারঙ্গম ছিলেন এস এম সুলতান। ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম, ডিসেম্বর ১৯৭৯

অ্যারিস্টটলের বয়ানে ‘Art is imitation mimesis’ তথা শৈল্পিক অনুকরণের মুখ্য বিষয় হলো চলমান মানবজীবন। অবিকল প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে শিল্পী ও কবিমনের পৃথক প্রেরণা সঞ্চারিত হয় বলে শিল্প হয়ে ওঠে আরও জীবন্ত ও আকর্ষণীয়।

কি গান, কি কবিতা কিংবা চিত্রকর্ম; শিল্পের গড়ন সদা সুন্দর। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সুন্দরকে বলেছেন রুচির প্রকাশ। ‘সৌন্দর্য্য ও প্রেম’ প্রবন্ধে রবিঠাকুরের বয়ান, ‘সুন্দর আপনি সুন্দর এবং অন্যকে সুন্দর করে। কারণ, সৌন্দর্য্য হৃদয়ে প্রেম জাগ্রত করিয়া দেয় এবং প্রেমই মানুষকে সুন্দর করিয়া তোলে।’

রাবীন্দ্রিক সুরেও ফুটে ওঠে ওই প্রেমেরই গোলাপ।

‘আমি রূপে তোমায় ভোলাব না, ভালোবাসায় ভোলাব।

আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো, গান দিয়ে দ্বার খোলাব।

ভরাব না ভূষণভারে, সাজাব না ফুলের হারে—

প্রেমকে আমার মালা করে গলায় তোমার দোলাব।’

রবিকবির ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বাগেশ্বরী প্রবন্ধমালা’য় শিল্প প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষের আদিমতম শিল্পে তার প্রথম জয়যাত্রার আনন্দ ও উৎসাহের প্রভাব এবং তেজ লক্ষ্য করা যায়। জড়তা থেকে মুক্তি দেওয়ার আনন্দ ও ভোগের অধিকার বাড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষকে ক্ষমতাবান করে তোলা, রস-সৃষ্টি ও রূপ-সৃষ্টি বিষয়ে এই হ’লো শিল্পের কাজ’।

জীবনানন্দ দাশ যাকে বলেন ‘কল্পনা ভাবনা’। তাঁর মতে, ‘যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয়’।

কবি জন কিটস কী দারুণভাবেই না বলেছেন, ‘Beauty is truth, truth beauty!’

এবং মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের পাশাপাশি শিল্প আমাদের শেক্‌সপিয়ারীয় দ্বান্দ্বিকতার বোধও শেখায়। শোকগ্রস্ত ও হতবাক হ্যামলেট আবিষ্কার করে যে তার বাবাকে তার চাচা খুন করেছে। এবার স্বগতোক্তি হয়। সে চিন্তা করে, কষ্টের মুখোমুখি হবে নাকি মৃত্যু দিয়ে জীবন নিষ্পন্ন করবে। এভাবে সৃষ্টি হয় চিরায়ত শৈল্পিক দ্ব্যর্থবোধক প্রশ্নের—‘To be or not to be, that is the question’!

শিল্প নিয়ে ভূমিকাটা বেশ বড় হয়ে গেল।

কারণ, আজ যাঁকে নিয়ে কথা বলব, তিনি বড় মাপের শিল্পকলার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী। শিল্প নিয়ে অল্পবিস্তর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি পেয়েছেন, কিন্তু দামি চাকরি বাগানোর জন্য সনদের ধার ধারেননি। প্রকৃতি যাঁর গুরু, কাগুজে সনদ তাঁর লাগেনি। এস এম সুলতান আমাদের আজকের শিল্পপাঠ। ১০ আগস্ট মহান এই শিল্পস্রষ্টার জন্মদিন। আমাদের হৃদয়ে‌ আসীন সুলতানের এই দিনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

আঁকিয়ে শেখ মোহাম্মদ সুলতান তথা লালমিয়া আমাদের প্রান্তিক মানুষের সখা। তাঁর ছবিতে চাষা, লাঙল, ঢেঁকি, গরুর গাড়ি, গ্রামীণ পথ, বৃক্ষলতা ও নদী যত সহজিয়া ঢঙে অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে, শহর ততটা নয়। আমাদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কিংবা পটুয়া কামরুল হাসান আছেন। তাঁদের মাঝখানেও বেশ আলাদা করে চেনা যায় এস এম সুলতানকে। নড়াইলের প্রাণপুরুষ নিজের মৃত্তিকার মায়াকে পরম মমতা ও যত্নে বিশ্ব চিনিয়েছেন।

শিল্পী এস এম সুলতানের ‘প্রথম রোপণ’ শীর্ষক একটি বিখ্যাত চিত্রকর্ম আছে। চিত্রশিল্পী রফিকুল আলম ছবিটি সম্পর্কে বলেছেন, এ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে সারা পৃথিবী যখন পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন আমাদের সামনে ভেসে ওঠে এস এম সুলতানের বিখ্যাত ছবি ‘প্রথম রোপণ’ (The First Plantation)। আদম মাটির পৃথিবীতে এসে প্রথম বৃক্ষ রোপণ করছেন। বাদামি শরীরের প্রচণ্ড শক্তিশালী এক মানুষ। তাঁর দেহ এই মাটির সঙ্গে দৃঢ়বদ্ধ। মাটি আর দেহের রং একাকার। ওপরে ‘কিউপিড’, যা রেনেসাঁস চিত্রকলায় মেলে। আদমের চোখে এক সম্মোহনী দৃষ্টি। কী দেখছেন আদম? অনেক কথা কিন্তু এই ঈষৎ বাঁকা চোখে! সুলতান এ চিত্রের মাধ্যমে তাঁর সারা জীবনের অনুভব, মাটি ও দেশ আত্মস্থ করে ধর্ম ও ইতিহাস মিশ্রিত করে নির্মাণ করেছেন অত্যন্ত আবেদনময়ী এই শক্তিশালী চিত্র।

নাগরিক সংবাদ-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: ns@prothomalo. com

সুলতানের ছবিতে গ্রামীণ সমাজের প্রকৃতি ও কৃষকদের জীবনচিত্র উঠে এসেছে পরম ভালোবাসায়। বাংলার মাঠ, ফসলের খেত, টলটলে নদী, মাছশিকারি জেলে, দাঁড় বাওয়া মাঝি, গাঁয়ের বধূ ও বলিষ্ঠ কৃষকের ছবি এঁকে‌ গেছেন জীবনভর। কৃষকদের ছবি তিনি এঁকেছেন পেশিবহুল শক্তিশালী পুরুষের রূপে। তাঁর গ্রাম্যবালারাও পেশিবহুল। দেশের অর্থনীতির মূল জোগানদার ও অন্নদাতা কিষাণ-কিষাণিকে তিনি হৃষ্টপুষ্ট দেখতে চেয়েছেন, রুগ্ন বা ভগ্নস্বাস্থ্য কিছুতেই নয়।

এ ব্যাপারে এস এম সুলতানের জবাবটাও খুব স্পষ্ট, ‘আমি আমার বিশ্বাসের কথা বলছি। আমার সব চিন্তা, সবটুকু মেধা, সবটুকু শ্রম দিয়ে যা কিছু নির্মাণ করি, তা কেবল মানুষের জন্য, জীবনের জন্য, সুন্দর থেকে সুন্দরতম অবস্থায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার ছবির মানুষেরা, এরা তো মাটির মানুষ, মাটির সঙ্গে স্ট্রাগল করেই এরা বেঁচে থাকে। এদের শরীর যদি শুকনো থাকে, মনটা রোগা হয়, তাহলে এই যে কোটি কোটি টন মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুসকল আসে কোত্থেকে? ওদের হাতেই তো এসবের জন্ম। শুকনো, শক্তিহীন শরীর হলে মাটির নিচে লাঙলটাই দাববে না এক ইঞ্চি। আসলে, মূল ব্যাপারটা হচ্ছে এনার্জি, সেটাই তো দরকার। ওই যে কৃষক, ওদের শরীরের অ্যানাটমি আর আমাদের ফিগারের অ্যানাটমি, দুটো দুই রকম। ওদের মাসল যদি অত শক্তিশালী না হয়, তাহলে দেশটা দাঁড়িয়ে আছে কার ওপর? ওই পেশির ওপরেই তো আজকের টোটাল সভ্যতা।’

সভ্যতার আদিপ্রাণ কৃষকের মর্যাদায় এত সুন্দর সাবলীল ও সহজ বয়ান‌ আর কবে কে দিতে পেরেছে!

রাজমিস্ত্রি বাবা বালকবেলায় নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি করেছিলেন। ছবি আঁকার নেশায় পাওয়া বালকের কাঠামোবদ্ধ বিদ্যাচর্চা ভালো লাগেনি। একাডেমিক পড়াশোনা যেমনটা রবিঠাকুর কিংবা কবি নজরুলেরও ভালো লাগেনি। ইশকুলের পরিদর্শক শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মুখাবয়ব এঁকে নিজের নাম রোশনাই করেন।

‘আবহমান বাংলা’, শিল্পী: এস এম সুলতান

পড়াশোনা বাদ দিয়ে চিত্রা নদীর পাড়ে ছবি আঁকার নেশাটাকে প্রশ্রয় দেন ওই ইশকুলের শিক্ষক রঙ্গলাল। তিনি নিজের বাসায় রেখে যত্ন করে আর্ট শেখাতে থাকেন। শিক্ষক রঙ্গলালের কন্যা অরোরা মন কাড়ে বালক লালমিয়ার। বিয়ে হয়ে যায় অরোরার। বিচ্ছেদব্যথায় কাতর লালমিয়া ফিরে আসে বাপের ভিটায়।

ওই ইশকুলের পাঠ চুকালেও জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নজর এড়াতে পারেন না। একরকম জোর করে ভর্তি করে দেন কলকাতা আর্ট কলেজে। রাখেন নিজের জমিদারবাড়িতে। মন যার গ্রামের প্রেমে পাগলপারা, তাঁর কি কলকাতা শহর ভালো লাগবে? ঠিক শেষ বর্ষে এসে লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে সোজা গ্রামের পথ ধরেন সুলতান।

গ্রামেও বেশি দিন থাকেননি তিনি। ১৯৪৩ সালে চলে যান কাশ্মীরে। সেখানকার প্রকৃতি ও আদিবাসীদের জীবনের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। সেসবই ফুটিয়ে তোলেন নিজের চিত্রকর্মে। ১৯৪৬ সালে তাঁর চিত্রকর্মের প্রথম প্রদর্শনী হয় সিমলায়। কানাডিয়ান শিল্পপ্রেমী মিসেস হাডসন সেই প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। পরের বছর দেশভাগ হলে সুলতান আবার ফিরে আসেন নিজ গ্রামে।

প্রতিষ্ঠা করেন ‘নন্দনকানন প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ও ‘নন্দনকানন ফাইন আর্টস স্কুল’। কালের বিবর্তনে সুলতানের জীবদ্দশায়ই আর্ট স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখনো চালু আছে ‘চাচুড়ী পুরুলিয়া প্রাথমিক হাইস্কুল’ নামে। তবে যশোরে প্রতিষ্ঠিত ‘একাডেমি অব ফাইন আর্টস কলেজ’‌ বর্তমানে ‘চারুপীঠ’ নামে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

সংগীতপ্রেমী এস এম সুলতান বাঁশের বাঁশি বাজানোয় দারুণ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শিল্পশিষ্যদের মধ্যে তাঁর শৈল্পিক জীবনদর্শন ছড়িয়ে গেছেন। শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোর সহজাত সদিচ্ছাকে আজীবন লালন করেছেন। গড়েছেন ‘শিশুস্বর্গ’ নামে চারুকলার আনন্দ বিদ্যাপীঠ। তিনিই প্রথম এশীয়, যাঁর আঁকা ছবি পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালির মতো বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্মের সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর ছবিগুলো প্রদর্শিত হয়েছিল লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট ও লেইস্টার গ্যালারিতে।

সুলতান তাঁর চিত্রকর্মের জন্য অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যান অব দ্য ইয়ার, একই বছর একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের আর্টিস্ট ইন রেসিডেন্স, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক এবং ১৯৯৯ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তিতে আজীবন সম্মাননা (মরণোত্তর) পদক উল্লেখযোগ্য।

শিল্পী এস এম সুলতানকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কথাসাহিত্যিক ও শিল্প সমালোচক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলাপিডিয়ায় গ্রন্থিত তাঁর নিবন্ধে বলেন, এস এম সুলতানের কাজে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিল জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের শক্তিকে প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং উপনিবেশিকোত্তর সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিল ‘আধুনিকতা’।

‘বাঙালি মুসলমানের মন’ গ্রন্থে শিল্পী এস এম সুলতান প্রসঙ্গে তাত্ত্বিক আহমদ ছফা সবচেয়ে জুতসই বক্তব্য বিবৃত করেছেন। আহমদ ছফা বলেন, ‘দ্য ভিঞ্চি, মিকেলাঞ্জেলো, রাফায়েল প্রমুখ শিল্পীর প্রকাণ্ড কল্পনা ও কল্পনার বলিষ্ঠতার ছাপ এত গভীর এবং অনপনেয় যে মনে হবে এসব চিত্র কোনো রকমের মধ্যবর্তিতার বালাই ছাড়া, সরাসরি রেনেসাঁস যুগের চেতনার বলয় থেকে ছিটকে পড়ে এই ১৯৭৭ বাংলাদেশের কৃষক সমাজে এসে নতুনভাবে জন্মগ্রহণ করেছে। ছবিগুলো আঁকার মতো মানসিক স্থিতাবস্থা অর্জন করার জন্য শেখ সুলতানকে সব দিতে হয়েছে। পরিবারের মায়া, বংশধারার মধ্য দিয়ে নিজের অস্তিত্বকে প্রবাহিত করার স্বাভাবিক জৈবিক আকাঙ্ক্ষা ভেতর থেকে ছেঁটে দিয়ে, এই চিত্রসন্তান জন্ম দেওয়ার একাগ্র প্রায় কাপালিক সাধনায় নিযুক্ত থাকতে হয়েছে সারা জীবন। শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েছে।

আর্নেস্ট বিনফিল্ড হ্যাভেল ভারতীয় শিল্পাদর্শের যে ব্যাপক সংজ্ঞা দিয়েছেন, কেউ তার আওতা ছাড়িয়ে যেতে পারেননি, একমাত্র সুলতান ছাড়া।’

আমাদের মনোজগৎ দখল করা এই ধ্যানমগ্ন সুলতানের জীবন, যশ ও খ্যাতি যখন তাঁর করতলে; ঠিক তখন তিনি বেছে নেন লোকালয়ের সংশ্রববিবর্জিত এক আরণ্যক জীবন। সেলিনা হোসেনের ‘পোকা মাকড়ের ঘরবসতি’র নিরেট উদাহরণ এক ভাঙা মন্দিরে ঠাঁই নেন নিষ্ঠাবান এই শিল্পী। হাঁস-মুরগি আর দুই ডজন বিড়াল তাঁর আবাসসঙ্গী। জয় করেন সাপ-বিচ্ছুসহ বিষাক্ত সরীসৃপের ভয়। তবে শেষ জীবনে এক হতদরিদ্র হিন্দু পরিবারের সংশ্রবে কাটান আজীবন বোহেমিয়ান সুলতান। পূর্বের হৃদ্যতার সূত্র ধরে সেই পরিবার বুনো আবছায়ায় স্বেচ্ছানির্বাসিত সুলতানকে সংসারের মায়ায় ফিরিয়ে আনে।

১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাসিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা এই শিল্পী। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান এস এম সুলতান। তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের ভেতর ম্যাসাকার, জিপসি পরিবার, কৃষক, প্রথম রোপণ, চর দখল ও আদম সুরত অন্যতম।

মানবীয় অভাবজয়ী চিত্রকর এস এম সুলতান সুখকে নিজের মতো করে গড়ে নিয়েছিলেন। শহুরে বাবুদের ঝা–চকচকে দরবারে শিল্পী সুলতানের হয়তো ঠাঁই হয়নি। কুটিল রাজনীতির ধরণ-ধারণ নিয়েও তাঁকে মাথা ঘামাতে হয়নি। তবে সুলতানের বিশেষায়িত রংতুলিকে চিনে নিয়েছে বাংলার রংধনু আর তরুলতা। সুলতানও বুঝে নিয়েছিলেন বিচিত্র মানুষের মন। চাষাভুষা গ্রামীণ মানুষ আর সেখানকার প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর এই অতুল্য আত্মিক সম্পর্ক আর মহত্তম উপলব্ধির অসাধারণ যোগ্যতা বাংলাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসকে নূতন দ্যোতনা দিয়েছে, যেখানে শিল্পী এস এম সুলতান একা একজন।

তথ্যসূত্র:

পোয়েটিকস—অ্যারিস্টটল

আলোচনা—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাগেশ্বরী প্রবন্ধমালা—অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাঙালি মুসলমানের মন—আহমদ ছফা

বাংলাপিডিয়া

দৈনিক প্রথম আলো

দ্য ডেইলি‌ স্টার