দুর্লভ নিদর্শনে সমৃদ্ধ এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর
প্রয়াত লেখক ও গবেষক আনিসুজ্জামান ‘জাদুঘরে কেন যাব’ প্রবন্ধে যথাযথভাবে জাদুঘরের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তুলে ধরেছিলেন। ওই প্রবন্ধে তিনি তরুণ প্রজন্মকে জাদুঘরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রবন্ধে দেখিয়েছিলেন কীভাবে নতুন প্রজন্ম জাদুঘরের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হতে পারে।
এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর তরুণ সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আবহে চিন্তার খোরাক জোগানোর মতো একটি স্থান। গত ২৯ অক্টোবর জাদুঘরটি ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে।এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল–সংলগ্ন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাঙ্গণে অবস্থিত। জাদুঘরটি ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাদুঘরটিতে ঢাকার নায়েব নাজিমদের ১৭০০ থেকে ১৯০০ সালের ইতিহাস ও ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে। মূলত নিমতলী প্রাসাদের পশ্চিম দিকের তিনতলাবিশিষ্ট ফটকটিই আজকের ঐতিহ্য জাদুঘর। মুর্শিদকুলী খান আঠারো শতকের প্রারম্ভে সুবা বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করলে মুর্শিদাবাদের নবাবদের নায়েব নাজিম–শাসিত একটি উপপ্রদেশে পরিণত হয় ঢাকা। এ সময় নবাবদের প্রতিনিধি হিসেবে একজন নায়েব নাজিম ঢাকার দায়িত্ব পালন করতেন। নবাবি শাসনামলের প্রাথমিক যুগে নায়েব নাজিমদের জন্যে কোনো স্বতন্ত্র প্রাসাদ না থাকলেও পরবর্তী সময়ে ইংরেজ আমলে কলকাতার কাউন্সিলের উদ্যোগে ঢাকার নিমতলী এলাকায় ১৭৬৫-৬৬ সালে নিমতলী প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়েছিল, যা নিমতলী কুঠি বা নিমতলী প্যালেস নামে পরিচিত। প্রাসাদটি মূলত মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করেই নির্মিত হয়েছিল। এই প্রাসাদে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি অপূর্ব মেলবন্ধন লক্ষ করা যায়।
ভবনটি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রথম কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। জাদুঘর ভবনের নিচতলায় তিনটি গ্যালারি রয়েছে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় দৈর্ঘ্য–প্রস্থে সমান একটি গ্যালারি রয়েছে। আর তৃতীয় তলায় ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিশাল গ্যালারি আছে। এখানে মসলিন কাপড়, ধাতব মুদ্রা, সতেরো ও আঠারো শতকের ঢাকার বিভিন্ন বনেদি পরিবারের ব্যবহৃত তৈজসপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। এ গ্যালারির একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো নবাব নুসরত জংয়ের ত্রিমাত্রিক ডিওরমা।
ডিওরমাটি মূলত নায়েব নাজিম নুসরত জংয়ের দরবারের একটি উপস্থাপনা। সাধারণ দর্শকদের জন্য জাদুঘরটি প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘর দেখার জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ১০ টাকা, সাধারণ দর্শক ২০ টাকা এবং বাইরের দেশের পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ঐতিহ্য জাদুঘরের একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে।
যেকোনো স্থান থেকে এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে হেরিটেজ মিউজিয়াম ভিজিট করা যাবে।
লেখক: সহকারী কিউরেটর, এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর