আলোর ফেরিওয়ালা: আজকের দিনটি হোক সংবাদপত্রের হকারদের

বাড়ি বাড়ি পত্রিকা বিলি করার জন্য সংবাদপত্রের হকারের প্রস্তুতি
ছবি: জাহিদুল করিম

‘পেপার, লাগবে নাকি আপনার পেপার!’ ১৮৩৩ সালে নিউইয়র্ক সিটির বিগ অ্যাপল স্ট্রিটে ১০ বছর বয়সী বার্নি ফ্ল্যাহার্টি যখন কথাটি বলছিল তখন কেউ কি ভাবতে পেরেছিল, ছেলেটিই পৃথিবীর প্রথম পত্রিকার বাহক বা হকার হিসেবে খ্যাতিমান হবে। বার্নি ফ্ল্যাহার্টির এ খ্যাতির কৃতিত্ব অবশ্য ভাগ করে দেওয়া যায় তখনকার নিউইয়র্ক সান পত্রিকার প্রকাশক বেঞ্জামিন ডে–কে। কেননা, তিনিই তরুণ আইরিশ বার্নি ফ্ল্যাহার্টিকে ১৮৩৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাঁর পত্রিকার ক্যারিয়ার বা বাহক হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে দ্য মিউজিয়াম অব দ্য সিটি অব নিউইয়র্ক ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োগকৃত প্রথম সংবাদকর্মীর প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাতে জাতীয় সংবাদপত্রের বাহক দিবস ঘোষণা করে।

সংবাদপত্র আবিষ্কারের পর থেকেই এর বাহক তৈরি হয়েছে। তাঁদের কাজের গুরুত্ব বিবেচনা না করে আমরা অনেকে এটাকে ছোট পেশা মনে করেছি। জেনে রাখা ভালো, অনেক দেশের স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের প্রথম চাকরি হিসেবে এ পত্রিকা বিলি করাকে বেছে নেয়। অনেকে হয়তো জানেন না, জেমস ক্যাগনি, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, এমনকি আইজ্যাক আসিমভ এবং মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মতো রথী–মহারথীরা তাঁদের জীবনের প্রথম দিকে স্থানীয় পত্রিকা বিলি করেছেন।

‘National Newspaper Carrier Day’ বা ‘জাতীয় সংবাদপত্র বাহক দিবস’–এর ঘটনাটি সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে হলেও বাঙালির অস্তিত্বেও পত্রিকা ও এর হকাররা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। ঘুম থেকে উঠে গরম ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চায়ের সঙ্গে সকালের পত্রিকা বাঙলিকে আজও নস্টালজিয়ায় বেঁধে রাখে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, হরতাল, করোনা মহামারি, লকডাউন, ঝড়বাদল, বন্যা—এমনকি কারফিউয়ের বাধা উপেক্ষা করে রোজ যে হকাররা আমাদের ঘরে পত্রিকা পৌঁছে দেন, তাঁদের জীবনেও কোনো চাওয়া–পাওয়া, সুখ–দুঃখের কথা থাকতে পারে!

২০২০ সালের ২৫ মার্চ, করোনায় লকডাউনের প্রথম ধাপেই সরাসরি প্রভাব পড়েছিল পত্রিকাশিল্পের ওপর। এর প্রভাব পড়ে এর সঙ্গে সংশিষ্ট প্রত্যেক মানুষের ওপর। অনেকেই ব্যয়সংকোচন নীতির মাধ্যমে টিকে থাকার চেষ্টা করেন। মাঠপর্যায়ে হকার ও এজেন্টদের অবস্থা মানবেতর হয়ে পড়ে। তারপরও সে সময়ে হকাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের পত্রিকা পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা আমাদের পাশে ছিলেন। আমাদেরও উচিত তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। যে হকার ভাইয়েরা রোজ সকালে আমাদের মতো পাঠকের হাতে পত্রিকা পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, সে জন্য আজকের দিবসে আমরা তাঁদের অভিবাদন জানাতেই পারি।

লেখক: এস এম তৌহিদ ইমাম, ঢাকা