‘মাছে–ভাতে বাঙালি’ যে বাক্যটি এখন মৃতপ্রায়
আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে ‘মাছে–ভাতে বাঙালি’। বাবা, চাচা ও মুরব্বিদের কাছে শুনেছি তাঁদের সোনালি অতীত ইতিহাস। নদ-নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, দাম ছিল কম, স্বাদ ছিল বেশি।
বাজারে বিক্রির পাশাপাশি প্রতিটি পরিবার খুব আয়েশ করে মাছ–ভাত খেতে পারত। একসময় মুখে মুখে ‘মাছে–ভাতে বাঙালি’ কথাটা ছিল। আমাদের প্রজন্মের সবাই বইয়ে পড়েছি মাছে–ভাতে বাঙালির গল্প। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, বাক্যটি হারিয়ে ফেলছে স্বকীয়তা।
গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নদীতে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। এত দিন ডিম ছাড়বে বলে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। আমার বাড়ি নদীর সন্নিকটে হওয়ায় সচরাচর ইলিশ ধরা ও কেনার চিত্র চোখে পড়ে। একসময় ইলিশের দাম কম থাকলেও বর্তমানে ইলিশের বাজারে আগুন।
জাতীয় মাছ ইলিশ এখন মধ্যবিত্তের কেনার সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে। এটাও গণমাধ্যমে এসেছে রপ্তানি আয় থেকেও দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেশি। আমি মনে করি, জাতীয় মাছ ইলিশের দাম সবার অনুকূলে থাকা উচিত। অথচ পয়লা বৈশাখ, বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে দাম চড়া হয়ে থাকে।
মাছ আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মাছ কেনাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাজারে মাছের দাম এতই যে চাষের মাছও কিনতে হিমশিম খেতে হয় নিম্নবিত্ত, মেসে বসবাসকারী এমন লোকের। জেলেরা চাইলেও এক টুকরা মাছ সন্তানের পাতে তুলে দিতে পারেন না। এমনকি তাঁদের শাকপাতা খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
দেশে এখন ৫৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত ও ২৮ প্রজাতির মাছ চরম বিপন্ন। এমনিতে খাল–বিলে কমছে মাছের সংখ্যা, তার ওপর বৃদ্ধি পাচ্ছে দাম। অন্যদিকে সেই খাল-বিল ভরাট করে গড়ে উঠছে নানা স্থাপনা। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাছে–ভাতে বাঙালি অবস্থানটি। মাছের চাহিদা ঠিকই পূরণ হচ্ছে, তবে সবার নয়।
যাঁদের আয় বেশি, উপার্জন বেশি, তাঁরাই চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। আমরা কি পারব আমাদের সোনালি অতীতকে ফিরিয়ে আনতে? আবার কবে হব মাছে–ভাতে বাঙালি?
লেখক: সিফাত রাব্বানী, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।