কুহেলিকা উৎসবে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রাণের উচ্ছ্বাস
শীতকে আর শুধু ‘হাড় কাঁপানো’ হিসেবে দেখা হয় না, বরং তা হয়ে উঠেছে আনন্দের এক অনন্য উপলক্ষ। শীতকে বরণ করার জন্য পৃথিবীর নানা দেশে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। কোথাও পিঠা–পুলির উষ্ণতায়, কোথাও আবার তুষারভাস্কর্যের শীতলতায়। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে এই শীতবরণ পেয়েছে নতুন এক মাত্রা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী ও পরিবেশবাদী সংগঠন ‘অভয়ারণ্য’ আয়োজন করেছে কুহেলিকা উৎসবের। এটি একটি ব্যতিক্রমী উৎসব, যেখানে হারিয়ে যাওয়া লোকজ ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়েছে নতুন প্রজন্মের সামনে। গত শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের কেন্দ্রস্থল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বটতলা।
উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে ছিল ৪৫টি বৈচিত্র্যময় স্টল, যা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের নানা দিককে ফুটিয়ে তুলেছে। প্রতিটি স্টলেই ছিল স্বকীয়তার ছাপ। লোকজ সংস্কৃতি ও গ্রামীণ ঐতিহ্যের মিশেলে গড়ে ওঠা এই উৎসব যেন ক্যাম্পাসে বাঙালিয়ানার এক মেলবন্ধন তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখর হয়ে উঠেছিল উৎসব প্রাঙ্গণ। কেউ এসেছেন পোশাক কিনতে, কেউবা পিঠার স্বাদ নিতে, আবার অনেকেই এসেছেন ক্যাম্পাসের উদ্যোক্তাদের কাজ দেখতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে। এ উৎসব শুধু কেনাকাটার জন্য নয় বরং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি আন্তরিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য এমন আয়োজন খুবই প্রয়োজন। কারণ, এটি শুধু বিনোদন নয় বরং আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। বন্ধুরা মিলে গল্প করা, স্টলে ঘোরাসহ সব মিলিয়ে কুহেলিকা উৎসব সত্যিই ব্যতিক্রমী এক অভিজ্ঞতা।’
অভয়ারণ্যের সভাপতি নাঈমুল ফারাবি বলেন, ‘কুহেলিকা উৎসব প্রতিবছরের এক অনন্য আয়োজন যেখানে আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সৃজনশীলতা ও উদ্যোগী মানসিকতার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ পান। এই উৎসব কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং নবীন শিল্পী ও উদ্যোক্তাদের জন্য একটি মঞ্চ, যেখানে তাঁরা নিজেদের প্রতিভা ও দক্ষতা তুলে ধরতে পারেন। সৃজনশীলতার জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে কুহেলিকা প্রতিবারই শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে, যা তাঁদের ভবিষ্যতের পথচলায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।’
শীতবরণের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও উদ্যোক্তাদের সৃজনশীল উদ্যোগ প্রমাণ করেছে যে এমন উৎসব কেবল আনন্দের জন্য নয়, বরং আমাদের শিকড়কে নতুনভাবে চেনারও একটি সুযোগ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এভাবেই ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনে ‘কুহেলিকা উৎসব’ হয়ে উঠেছে শীতকে উপভোগ করা ও সংস্কৃতিচর্চার এক নতুন অধ্যায়।
শাহরিয়ার কবির রিমন
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।