বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে হবে
নদীর নাম ধলেশ্বরী। ধলেশ্বরীর এপারে কেরানীগঞ্জ, ওপারে মুন্সিগঞ্জ। মুন্সিগঞ্জের কুচিয়ামোড়া নামের স্থান দিয়ে ধলেশ্বরী নদী পার হওয়ার সময় দেখা গেল, সেতুর নিচে, নদীর দুই পাড়ে সারি বাঁধা নৌকা—বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন। নদীর পাড়েই বেড়া আর পলিথিন দিয়ে বানানো ঘর; অস্থায়ী বেদেপল্লি। সেখানে ছোট শিশুরা খেলছে। এসব শিশুকে দেখে মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, এসব শিশু কি স্কুলে যায়? পড়াশোনা করে?
কয়েক দিন পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে ধলেশ্বরী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অস্থায়ী বেদেপল্লিতে যাই। ওখানে গিয়ে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আমরা বিস্মিত হই। বিভিন্ন বয়সী শিশুদের মধ্যে একটি শিশুকেও পাওয়া গেল না যে স্কুলে লেখাপড়া করে। এর কারণ হিসেবে বেদে সম্প্রদায়ের কেউ কেউ বললেন, দীর্ঘদিন তাঁরা এক জায়গায় থাকেন না। জলে ভাসা শেওলার মতো তাঁদের জীবন। তাই সন্তানদের স্কুলে ভর্তির বিষয়ে তাঁরা আগ্রহী নন। আর সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হচ্ছে, বেদে সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোকজনই মনে করেন, স্কুলে ভর্তি হতে টাকা লাগে, মাসে মাসে মায়না (বেতন) লাগে। তাঁরা জানেন না সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়তে কোনো টাকাপয়সা লাগে না। বরং সরকার উপবৃত্তি নামে প্রতি মাসে কিছু টাকা দেয়, বিনা পয়সায় বই দেয়, বছরের শুরুতে স্কুল ইউনিফর্ম, জামা–জুতা কিনতে এককালীন কিছু টাকা দেয়।
আমি ও আমার সঙ্গে থাকা দুজন সম্মানিত শিক্ষক দীর্ঘ সময় নিয়ে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় ও সুফল সম্পর্কে, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে সরকারে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে। বিদ্যালয়ে ভর্তির উপযোগী বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মা–বাবা আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছেন, তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিকটস্থ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করাবেন। কিন্তু শুধু তাঁদের মৌখিক আশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে আমাদের থেমে গেলে হবে না, আমাদের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়মিত এসব বেদেপল্লি পরিদর্শন করতে হবে, প্রতিটি শিশুর কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে। কোনো সম্প্রদায়ের শিশুদের বাইরে রেখে আমরা বিদ্যালয়ে একীভূত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ও সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারব না।
*লেখক: মো. আমিনুর রহমান, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সিরাজদিখান, মুন্সিগঞ্জ