প্রথম আলোসহ বিভিন্ন দৈনিকে কিছুদিন আগে একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ঠিকমতো পড়তে পারে না’। এই শিক্ষার্থীগুলোর মধ্য থেকে কেউ বছরের পর বছর পরবর্তী ধাপে যায়। বেশির ভাগই হয়তো ঝরে পড়ে। কেউ কেউ এই মানহীন শিক্ষা নিয়েই শিক্ষাজীবন শেষ করে। ফলাফল অদক্ষতা বা বেকারত্ব বরণ!
শুধু শিক্ষাদানের নিম্নমানের কারণে একটু সামর্থ্যবান মা–বাবা তাঁদের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠান না। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের তা–ও বিকল্প রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর মানহীন শিক্ষাদানের বলি হওয়া শিক্ষার্থীরা? শিক্ষকেরা বরাবর নিজেদের দাবি ও চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়ে থাকেন, যেমন শিক্ষার্থীরা বাড়িতে পড়তে পারছে না, ক্লাসে অধিক শিক্ষার্থী, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তারিক মনজুর স্যারের মতে, ‘শিক্ষার্থীর দক্ষতা অর্জিত হলো কি না, এই নিয়ে মা–বাবা, এমনকি শিক্ষকেরাও বিশেষ মনোযোগী নন। অথচ শিক্ষকদের কাজ ছিল শিক্ষার্থীর শিখন–ঘাটতি বা শিখনের দুর্বলতা শনাক্ত করা। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।’ অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে নিজেদের উন্নতি করার প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়।
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]
একটা লম্বা সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ধরে রাখে। এই সময়ের মধ্যে তাকে পাঠদান ছাড়া অন্য সাপোর্ট প্রদান নিশ্চিত করতে মনোযোগী হতে হবে। শুধু ক্যারিয়ার শিক্ষা বই ক্লাসে পড়ালেই চলবে না। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের শুধু প্রতিযোগী না করে, দায়িত্ব বণ্টন, বিভিন্ন প্রোগ্রামে তার দক্ষতা অনুযায়ী কাজে যুক্ত করা, ভলান্টিয়ারিং, লিডারশিপ, ক্লাব গঠন ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে! পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের উদ্দেশ্য ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন হয়, সেটি নিয়ে কাজ করা জরুরি।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তব প্রয়োগের নিশ্চয়তা দেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাহলে এতগুলো সরকারি বিদ্যালয় শুধু কি লিটারেসি রেট বৃদ্ধিতেই কাজ করে যাবে? বছরের পর বছর বিদ্যালয়গুলো নিজেরা উদ্যোগী না হয়ে বরং দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে বিদ্যালয়ের চ্যালেঞ্জ অনেক। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রায় সবার হাতে প্রযুক্তি রয়েছে এবং শিক্ষকদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন পথ রয়েছে। শিক্ষক নিজের উন্নতিতে নিজে মনোযোগ দিলে তাঁর শিক্ষার্থীরাও উন্নত হবে! অবশ্যই বিদ্যালয় মানে শিক্ষকের একার উন্নতি নয়। তাই বিদ্যালয়গুলো সম্মিলিতভাবে শিক্ষার্থীদের বর্তমান উপযোগী ও কর্মদক্ষ করে গড়ে তুলতে নিজেরা কাজ করবে। পদক্ষেপগুলো নেওয়ার ফলে কী কী চ্যালেঞ্জ আসে, সেটি তুলে ধরবে। এটিই আসলে কাম্য! বিদ্যালয়গুলো নিজেদের উন্নতির দায় নিজে নেওয়ার সময় এসেছে।
মনে আছে, তোত্তোচানের সেই মানবিক ও সৃজনশীল স্কুল ‘Tomoe Gakuen’ বা ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ ইতালির বারবিয়ানা স্কুলের কথা? এমন দায়িত্ববান প্রতিষ্ঠানগুলো আদৌ কখনো পাব! আশায় বাঁচে চাষা, আমরা সাধারণেরা হয়তো সেই আশাতেই বাঁচতে পারি...
*লেখক: তামান্না বেগম, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়