ধর্ম, সংস্কৃতি ও লোকজ ঐতিহ্যের মেলবন্ধন রাস পূর্ণিমা
বাংলার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো রাস পূর্ণিমা। প্রতিবছর কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে ভক্তি, প্রার্থনা আর লোকজ আনন্দের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসব পালন করেন। সারা দেশে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে এই উৎসব ভক্তি, আনন্দ এবং লোকজ ঐতিহ্য ও উৎসবের এক অপূর্ব মেলবন্ধনে রূপ নেয়। আজ ৫ নভেম্বর রাস পূর্ণিমা।
এই দিনে ভক্তরা মনের সব হিংসা, ভয় ও দুঃখ-কষ্টকে দূরে রেখে আনন্দে মেতে ওঠেন। দিনটিতে ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজের, পরিবারের ও সব জীবের মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করেন।
উপকূলজুড়ে উৎসব ও পবিত্র স্নান
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে বাংলাদেশের কুয়াকাটা, মহিপুর, পটুয়াখালী, টেকনাফসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোয় বিশেষ উৎসব পালিত হয়। বিশেষ করে কুয়াকাটায় এই দিন ভোরে হাজারো পুণ্যার্থী সমুদ্রের জলে পবিত্র স্নান সম্পন্ন করেন। একই ধরনের দৃশ্য ওপার বাংলার দীঘাতেও দেখা মেলে।
গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি
রাস পূর্ণিমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ‘রাস মেলা’, যা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে একটি বড় আকর্ষণ। এই মেলাকে কেন্দ্র করে দিনভর চলে হস্তশিল্প, মাটির খেলনা, ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পায়েস, নাগরদোলা ও পুতুলনাচের মতো লোকজ উৎসব। আজ এই দিনে উপকূল এলাকায় এবং গ্রামীণ জনপদে বিভিন্নভাবে সাজে।
রাস পূর্ণিমা এখন কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক মূর্তপ্রতীক হয়ে উঠেছে। সংস্কৃতি, পর্যটন ও লোকজ ঐতিহ্যের এই মেলবন্ধন প্রতিবছর বাংলাদেশে এক অনন্য ঐতিহ্যবাহী উৎসবের জন্ম দেয়, যা মানুষের মধ্যে তৈরি করে এক নতুন আনন্দ ও উৎসবের আমেজ; আলোকিত হয় মানব মন ও মনন।
*লেখক: অজয় চন্দ্র দে, শিক্ষার্থী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি