গ্রীষ্মের আগুনরঙে রাঙা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতিটি ঋতু সাজে নিজস্ব রূপে। প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহের মধ্যেই কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, কনকচূড়া, লাল সোনাইল, কাটগোলাপসহ নানা ফুলে সেজেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শ একর। এখানে গ্রীষ্মের অর্থ শুধু গরম নয়—এটা এক রঙিন অনুভব, প্রকৃতির চিত্রপটে নীরব কবিতার মতো আঁকা অনবদ্য নান্দনিকতা।
ঋতুরাজ বসন্ত বিদায় নিয়েছে ঠিকই, তবে তার রেখে যাওয়া রঙের আঁচড় গ্রীষ্মে রূপ নিয়েছে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম রাজত্বে। সাত শ একরের এ ক্যাম্পাস যেন রূপ নিয়েছে এক বিশাল ক্যানভাসে, যেখানে প্রকৃতি নিজ হাতে এঁকেছে আগুনঝরা রঙের গল্প।
জারুলের বেগুনি, কাঠগোলাপের শুভ্রতা, সোনালুর ঝুলন্ত হলুদ ফুল, আর কৃষ্ণচূড়ার উজ্জ্বল লাল ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে লালরঙা কৃষ্ণচূড়া। সবুজ পাতা যেন হারিয়ে গেছে লাল রঙের ফুলের মধ্যে। এই দৃশ্য আরও চোখে পরে ছাত্রী হল–সংলগ্ন রোড, চৌরঙ্গী, শিক্ষক ক্লাব, মুন্নী চত্বর, সমাজবিজ্ঞান অনুষদসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাস্তার ধারে ঝরে পড়া ফুলের পাপড়িতে মনে হয় প্রকৃতি যেন বিছিয়ে দিয়েছে এক ফুলেল গালিচা।
জারুল ফুলের দেখা মেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিনিকেতন, সুইজারল্যান্ড ও পুকুরপাড়গুলোতে। রোদের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জারুলের সৌন্দর্য যেন বৃদ্ধি পায়। জারুল ফুলের ছায়ায় রচিত হচ্ছে এক কাব্যিক আবহ। লাল সোনাইলের দেখা মিলে প্রায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষ করে শহীদ সালাম-বরকত হলসংলগ্ন রাস্তায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে লাল সোনাইল।
ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসছেন দর্শনার্থীরা। ঢাকা অদূরে অবস্থিত হওয়ায় ইট-পাথরের নগরী ছেড়ে পরিবার নিয়ে অনেকে আসছেন প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সন্তানদের দেশীয় ফুল চেনাতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় অভিভাবকদের।
ঢাকা থেকে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পরিবারসহ এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবু সালেহ। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলের সৌন্দর্য দেখ পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। গ্রীষ্মকালে মূলত দেশীয় ফুল ফোটে। এগুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। তাই বাচ্চাদের দেশীয় ফুলের সঙ্গে পরিচিত করার জন্য পরিবারসহ এসেছি।
‘নাগরিক সংবাদ’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
শুধু দর্শনার্থী নন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ হচ্ছেন ফুলের সৌন্দর্যে। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু তালেব বলেন, ‘গ্রীষ্ম এলেই জাবির প্রকৃতি এক নতুন রূপে ধরা দেয়। এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাকে বারবার মুগ্ধ করে। ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রকৃতিও যেন নতুন সাজে সেজে ওঠে, যা বারবার বাংলাদেশের ষড়ঋতুর ঐশ্বর্যকে মনে করিয়ে দেয়। চারপাশে জারুল, কৃষ্ণচূড়া আর কাঠগোলাপের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য পথচলার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। আর বিকেলের রোদ যখন লেকের শান্ত জলে সোনালি আভা ছড়িয়ে দেয়, তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন নিঃশব্দে এক অনুপম কাব্য রচনা করছে আমাদের জন্য।’
এই ক্যাম্পাসে গ্রীষ্মের রোদ শুধু পোড়ায় না, বরং রাঙিয়ে তোলে প্রকৃতির ক্যানভাস। প্রতিটি গাছের ডালে, প্রতিটি ফুলের পাপড়িতে, প্রতিটি হাওয়ার দোলায় যেন লুকিয়ে আছে সৌন্দর্যে নীরব আহ্বান।