‘ক’ কাহিনি

করোনাকে কেন্দ্র করে এ লেখাটির প্রতিটি শব্দেরই প্রথম অক্ষর ‘ক’।
কোভিড করোনা! কৌশলে কাউকে কাবু করার কালের ক্লান্তিহীন কারিকর! কিশোরগঞ্জও করালগ্রাসী কোভিড করোনায় কোণঠাসা! কোথাও কোথাও কফিন কাঁধে করুণ কাফেলা কতজনকেই না কাঁদাইতেছে! কাঙ্ক্ষিত কোরবানিতেও করোনার কোপ! কী কষ্টের কথা!

কিশোরগঞ্জেরই কাছাকাছি কটিয়াদী কলেজের কেরানি কার্তিক কুমার কর্মকারের কালোকেশী কনিষ্ঠা কন্যা—কাজলী কর্মকার। কলেজকন্যা কুমারী কাজলী কুলবিরোধী কিছু কর্মের কারণে কুলভ্রষ্ট কিন্তু কণ্ঠে কোকিলের কুহু তান।
কোকিলকণ্ঠী কাজলীও করোনাক্রান্ত। কণ্ঠে কেবল করোনার কাশি।

কাজলী কাশিতে কাশিতে করুণ কণ্ঠে কাকাকে কহিলেন, ‘কাকা, কারখানার কাপড় কেনাকাটায় কৃষাণীরা কিছুটা কৃচ্ছ্র সাধন করিলেও কলকাতাকেন্দ্রিক ক্লাবগুলোর কিশোরীদের কাছে কুষ্টিয়ার কালো কাতান কাপড় কেনার কদর কল্পনাতীত। কীর্তিমান কতিপয় কলাকুশলী কিংবা কিশোর কবিও কালি-কলমের কল্যাণে কদরের কিছু কার্যকর কথা, কৌশলে কখনো কবিতার কিতাবে, কখনোবা ‘কালের কণ্ঠ’ কাগজে কচি–কাঁচাদের কলামে কহিয়াছেন; কিন্তু কাকা, কস্মিনকালেও কেউ কি কখনো কহিয়াছেন—কী কারণে, কিসের কারসাজিতে, কেমন করিয়া, কোথাকার কোন কাশ্মীরি কম্বল কিংবা কর্ণাটকের কাতান কাপড়ের কেবলই কল্পিত কদরের কারণে কালক্রমে কুলীন কুলের কৃষকের কোমলমতি কন্যাদের কাছেই কাঙ্ক্ষিত কালজয়ী কারুকার্যময় কাতান কাপড়ের কার্যত কদর কমিল?’ কর্মস্থলে কাজে-কর্মে কুশীলব কিন্তু কেবলই কৌতূহলী কাজলীর কঠিন কথায় কিঞ্চিৎ কর্ণপাত করিয়া ক্লান্ত কাকা কুষ্টিয়ার কাতান কাপড়ের ক্রমে ক্রমে কদর কমার কয়েকটি কারণের কথা কোমল কণ্ঠে কাজলীর কাছে কানে কানে কহিলেন। কৃষ্ণকায় কাকাকে কাতান কাপড়ের ক্রান্তিকালের কাল্পনিক কষ্টের কিচ্ছা-কাহিনি কহিয়া কাজলী, কংসের কলসী কাঁখে করিয়া কাকিকে কহিলেন, কলকল কলরবে কল্লোলিত কাবেরী কোলের কেয়া কুঞ্জে, কোয়েলের কাব্যিক কলকাকলি কিংবা কেতকী-কদম কুসুম কাননে, কোকিলের কণ্ঠে কুহু কুহু কূজনের কতই কারিশমা, কিন্তু কাকি, কহেন তো কাকের কুলায় কেন কাক-কোকিলের কাজিয়ার কুরুক্ষেত্র? কেন কদর্য কাক কর্কশ কণ্ঠে কানের কাছে কেবল কা কা করে?

কাঁড়ি কাঁড়ি কল্পিত কথার কৌতুকে কৃপণা কাকি, কিলানো কাঁঠালের কদলী কচলাইতে কচলাইতে কহিলেন, কাক কালো, কোকিলও কালো; কোকিলের কারিশমা কুহু তানে। কত কিশোর কিশোরী কোকিলের কুহু তানে কৌতূহলী! কিন্তু কা কা কলরবে ক্রমাগত কোলাহলে, কর্ণকুহর কলুষিত করিয়া কেরামতির কৃতিত্ব কুড়ানোই কুৎসিত কেতাদুরস্ত কাকের কাজ।

কাজলীর কাকির কথা কী কহিব! কুচকুচে কালো কেশ, কাকিকে করিয়াছে কবির কালোত্তীর্ণ কবিতার কৃষ্ণকলি। কাকাও কাকিকে কথায় কথায় কৃষ্ণকলিই কহিতেন। কাকির কিশোরী কালের কথামৃত, কানের কনক, কাজল কালো কেশে কৃষ্ণচূড়ার কলি, কারুকাজ করা কাপড়ের কুঁচা, কটির কটিবন্ধ, কবজির কাচের কংকনে কিশোরী কাকি কৈশোরের কাকাকে কুপোকাত করিয়াছিলেন।

কাকি কাজে কর্মে কিছুটা কুঁড়ে কিন্তু কসমেটিকসে কাকির কায়াটা কাননের কুসুম! কিন্তু কলঙ্কের কালিমায় ক্লিষ্ট কামাতুর কাকির কিশোরীকাল। কুদৃষ্টিতে কুক্ষিগত কাকি, কামরূপ-কামাক্ষার কামিনী! কাকির কলঙ্কময় কিছুকাল কাটিয়াছে কুষ্টিয়ায় কবিগুরুর কুঠিবাড়ির কাছে। কিশোরদের কাছে কিশোরী কাকির কুসুমীয় কায়ার কদরের কারণে কামুকেরা কলকাতায় কুড়িটি ক্লিনিকে কাকির ক্লোন করিয়াছিলেন। কত কামুক কাঁড়ি কাঁড়ি কড়িতে কাকিকে কুক্ষিগত করার কামনা করিয়াছিলেন। করাচির কাদিয়ানীদের ক্যাফেতে কিছু কিশোরের কুসঙ্গের কারণে কুলগর্বের কাকি কলঙ্কিনী। কিশোরীকালীন কীর্তি কম করেননি কাকি! কার্তিকের কালরাতে কেরোসিনের কুপির কিরণে কুল-কলঙ্কিনী কামাচারী কাকি কয়েকবার কীটনাশকে কলঙ্কের কিনারা করার কামনা করিয়াছিলেন কিন্তু কাকার কামনাশীষের কারণে করেননি।

কাকির কথায় কমলের কমনীয়তা কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না। কাজের কথা কহিলেই ক্যাট ক্যাট করেন। কাকির কুঁড়েমির কারণে কাকার কাপড়চোপড় কাকাই কাঁচিতেন। কুমিল্লায় কন্যাদের ক্যাডেট কলেজের কোচিং ক্লাসে কিছুদিন ক্লাস করিয়া কাকি কোনোমতে কেবল কেমিস্ট্রির কোর্স কমপ্লিট করিয়াছিলেন। কেউ কেউ কহেন, ক্লাসটিচাররা কাকিকে কিছুটা কৃপা করিয়াই কেমিস্ট্রিতে কৃতকার্য করাইছিলেন! কিন্তু কাকি-কর্তা, কর্ম, করণ কারকের কঠিন কিছু কারক করিয়া ক্লাসে কৃতিত্ব কুড়াইয়াছিলেন।

কাকি কুশনের কসরতে কুটিরে কাঁথা, কম্বল, কোলবালিশ কিংবা কামিজে কিছু কারুকাজ করেন। কালেভদ্রে কাকার কাগজ কলের কাগজও কুড়ান।

কোঁকড়ানো কেশের ক্রিকেটপ্রিয় কাকা কিন্তু কর্মচঞ্চল। কুলাভিমানের কাকি কাস্টে কায়স্থ কিন্তু কাকা কাপালি। কাপালিদের কৃষ্টি-কালচার কাকতালীয়ভাবে কিছুটা কায়স্থদের কাছাকাছি। কাকার কথায় কথায় কেবল কাজ-কাজ-কাজ। কখনো কখনো কথা কহেন কেবল ‘ক’-কে কেন্দ্র করিয়া। কড়চা করা কথাবার্তায় কেবলই কাব্যরস। কৃষ্ণনামের কাঙাল কাকার কণ্ঠে কেবল করুণার কৃপাসিন্ধু ‘কৃষ্ণ’ ‘কৃষ্ণ’ কথা। কৃষ্ণভক্ত কাকা কাজ করিতেন ক্যালিফোর্নিয়ার কাগজ কোম্পানির কারখানায়। কর্মকালীন কথা কহিতেন কম। কহিতেন, ‘কর্ম কর’, ‘কর্মফলের কথা কহিওনা’। কদাচিৎই কাউকে কটু কথা কহিয়াছেন; কখনো ক্রাইম করিয়া কোটিপতির কামনা করেননি।

কাগজকলে কাজ করা কঠিন কিন্তু কাকার কাজটা কোয়ালিটিসম্পন্ন। ক্যামেরা কিংবা কম্পিউটারকেন্দ্রিক। কিছু কিছু কাজ কেবলই ‘কাট-কপি’-র কারিশমা।

কৈশোরে কুমুদের কাদাজলের কেলি, কাবাডি, কানামাছি কাকাকে কখনো কখনো কাঁদায়। কাকার কিশোরকাল কিন্তু কাটিয়াছে কলকাতায় কর্মচারী কলোনিতে। কখনো কাস্তে-কোদালে কৃষিখেতে কৃষিকাজ, কখনো কর-কসরতে কুমারের কাজ, কখনো কুলির কাজ করিয়া। করায়ত্ত করিয়াছিলেন করাতির করাতকলের কাজ, কাঠুরিয়ার কুঠারে কাঠ কাটার কাজও। কাজগুলোতে কড়ি-কাঞ্চন কামাই করা কঠিন কিন্তু কায়িক কষ্টের। কঠোর কষ্টের কশাঘাতে কর্করা কুখাদ্যে কাটিয়াছে কাকার কিছুকাল।
কর্তৃপক্ষের কাছে কর্মদক্ষতায় কাকা কিন্তু কিংবদন্তিতুল্য। কাগজের কমার্শিয়াল ক্রেতারাও কাকার কাজের কোয়ালিটির কথা, কাজেতে কর্তব্যনিষ্ঠার কথা কয়েকবার কোম্পানির কনফারেন্সে কায়মনোবাক্যে কহিয়াছেন। কোম্পানিও কাকার কিছু কৃতিত্বপূর্ণ কর্মের কপিরাইট করিয়া কাকাকে কৃতার্থ করিয়াছে। কোথায় কোন কর্মচারীর কখন কী কাজ, কাকাই কর্তৃপক্ষকে কহিতেন। কোম্পানির কল্যাণকর কাজের কর্তৃত্ব কার্যত কাকার কাছেই। কর্মনিষ্ঠ কাকা কখনোই কায়কারবারে কপটতা করেননি; কোম্পানির কড়ি কুক্ষিগত করার কল্পনাও করেননি। কাগজে–কলমে কাকাই কারখানার কর্ণধার।

কারখানাটির কচকচে কাগজে কানাডার কয়েকটি করপোরেট কোম্পানির কালির কাঙ্ক্ষিত কম্বিনেশনের কারণে কাগজটির কদর কানাডার কিছু কবির কাছেও। কাগজ ক্যাশে কিনিলেই কিছুটা কমিশন। ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু কারবারি কাগজের কিয়দংশ কারখানার কাউন্টারে ক্যাশে কিংবা কিস্তিতে কিনেন। কিছু কারবারি কালোবাজারে কারচুপি করিয়া কিনিলেও কানাডিয়ান ক্রেতারা কার্টনে কার্টনে কাগজ ক্রেডিট কার্ডেই কেনেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার কাগজ-কলমের কারখানাগুলোতে করোনাকালেও কাজ করিতেন কমছে কম কয়েক কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারী। কলেজ ক্যাম্পাস, ক্যানটিন, কোর্ট কাচারি, কাউন্সিলর কার্যালয় কিংবা কোম্পানির কর্মজীবীদের কণ্ঠে কেবলই কোভিড করোনা কিংবা কোয়ারেন্টিনের কথা। ক্লিনিকের কারও কারও কণ্ঠে করোনার কিটের কার্যকারিতার কথাও।

কাকার কারখানারই কয়েকজন কর্মোদ্যম কর্মীও করোনাক্রান্ত। কিন্তু কে কার কাছে কহিবে কার কষ্টের কথা। কিসের করোনা! ক্যালিফোর্নিয়ায় কাতারে কাতারে করোনা রোগী কিন্তু কে করে করোনাকে কেয়ার! কুয়েত, কেনিয়া কিংবা কলম্বিয়ার কিছু কুতুবের কাছে তো ‘করোনা’-‘কোয়ারেন্টিন’—কেবলই কৌতূহল। কেউ কেউ করোনাক্রান্তদের করিতেছেন কারণহীন কটূক্তি। কামারে-কুমারে করোনাকেন্দ্রিক কাজিয়া, কিষান-কিষানির কোন্দল, কাঠুরে-কামলার কথা–কাটাকাটি, কত কলরব, কত কিচ্ছা! কার্তিকের কুহেলিকায় কেউ করিতেছেন করতালে কীর্তন, কেউ কাশিতেছেন ক্রিমিনালের কাশি! করোনাতে কারারুদ্ধ কিছু কয়েদির কর্মকাণ্ড ক্যালিফোর্নিয়ার কারাগারগুলোকেও করিয়াছে কলুষিত। কারা-করিডরে কয়েকজনের ক্যাঁ-কু ক্যাঁকানিতে কর্তব্যরত কারারক্ষীদের কাজ করাই কঠিন।

ক্যালিফোর্নিয়ায় করোনা ক্রমবর্ধিষ্ণু! কিন্তু কিশোর–কিশোরীদের কেনাকাটা কিছুতেই কমেনি। কারখানারই কিছু কর্মী কোয়ারেন্টিনেও কেক কাটিয়া করিতেছেন কৌতুক! কমার্স কলেজের কলাভবনে কৌতুকপ্রদ কিছু কিশোরের কেশ কালচার-কোরিয়ার কেশকর্তা কিমকেও করিয়াছে কৌতূহলী। কত কিসিমের কেশে, কত কালারের কলপ! কেমিস্ট্রি ক্লাসে কারও কারও কুশ্রী কার্যকলাপে কর্তৃপক্ষের কাছে কলেজে করোনা কন্ট্রোল করাই কঠিন। কোনো ক্যাপসুলে কাজ করে না কোভিড করোনা; কাজ করে কি না কোভিশিল্ডে।

করোনাকালে কাকাও কয়েক দিন কখনো কখনো কাশিতেছিলেন। কিছুটা কফহীন কাশি। কিন্তু কারখানারই কিছু কুলাঙ্গার কাকার কাশির কথা কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে কহিলেন। কাশিটা ‘কী কারণে’—কেউ কিন্তু কহেননি। কাকা করোনাক্রান্ত কি না—কারখানার কেউ কনফার্মও করেননি। কাশিকেন্দ্রিক কারও কারও কিছু কথা কেবলই কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কেউ কেউ কাঁচকলা কুচি কুচি করিয়া কাটিয়া কাঁঠালের কদলী কাইতে কিংবা কোকাকোলাতে করিয়া কুলকুচির কথা কহিলেন। কী কিম্ভূত কথা!
কাকা কুপ্রথায় ক্রোধান্বিত। করোনাতেও কুচিকিৎসা! ক্ষোভে খেপিয়া কহিলেন, ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন কুষ্মাণ্ড কোথাকার’! কীইবা কহিব! কবিরাজিতে কিনা করোনা কিউর! কয়লা কচলাইলে তো কেবলই কালি! কোনো কোনো কুশীলব করোনাতে কর্পূর কিংবা কালোজিরার কার্যকারিতার কথা কহিলেও কেউ তো কাঁচকলা কিংবা কাঁঠালের কথা কহেননি। কর্মমন্দ কাকার কপালটাই কালিমালিপ্ত (!)। কোম্পানিতে কর্মকালীনই কাকাকে কয়েকবার কালো কুকুরেও কামড়াইয়াছিল!

কতজনে কত কথা কহিলেন, কত কিছু করিলেন; কেউ করিলেন করতালি কর্মসূচি! কিন্তু করোনায় কার্যত কী করণীয়, কাজের কথা কিছুই কহিলেন না। কয়েকজন কহিলেন, কাকা কোলন কিংবা কলোর‍্যাক্টাল ক্যানসারাক্রান্ত! কিন্তু কোলন ক্যানসারের কনফার্মেশন তো কেবল কোলনোস্কোপিতে। কাজেই কোম্পানি কাকাকে করাইলেন কমিউনিটি ক্যানসার ক্লিনিকে কোলনোস্কোপি। কিন্তু কোলনোস্কোপিও ক্লুহীন।
কাকার কাশির কারণে কর্তৃপক্ষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। করিলেন করোনা কন্ট্রোলের কার্যকরী কারিগরি কমিটি। কার্যকর করিলেন কারখানায় কঠিন কিছু কালাকানুন। কখন কাকে কী করেন কওয়া কঠিন। কর্মস্থলে কাঁধে কাঁধ কোলাকুলি কিংবা করমর্দন করিলেই কঠোর কারাদণ্ড। করোনায় কোম্পানির ক্লিয়ার কাট কথা—‘কাশির কর্ম কেবল কনুইতে’!

কঠিন কালাকানুনে কর্তৃপক্ষ কথায় কথায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করেন কোয়ারেন্টিন। কেননা করোনাতে কোয়ারেন্টিনের কার্যকারিতা কল্পনাতীত! কিন্তু কর্তৃপক্ষ কতজনকে করাইবে কোয়ারেন্টিন! কে করিবে কারখানার কাজ? কার্যাদেশ কার্যকর করার করিতকর্মা কর্মী কই? কুম্ভকর্ণ কুঁড়ে কর্মীদের তো কেবল কাপকে কাপ কেটলির কফিতে কালক্ষেপণ করাই কাজ! কাশির কারণে কাকারই কাছের কনিষ্ঠ কর্মকর্তা কপাল কুঁচকাইয়া কটমট করিয়া কাকাকে কুৎসিত কমেন্ট করিয়া কহিলেন কিছু কড়া কথা। কারখানা কমপ্লেক্সে কেন কাশিয়াছেন, কখন কাশিয়াছেন, কতবার কাশিয়াছেন—কত কৈফিয়ত! কুশিক্ষায় কুখ্যাতরা কাজের ক্ষতি করিয়া কুমন্ত্র, কুকথা কহিতে কেউ কম কহেন না। কারখানাতে কাকার করোনার কারণে কর্মবিনাশীদের কত কানাকানি, কত কর্কশ কথা! কুকর্মের কাজি, কোম্পানিরই কর্মাধ্যক্ষ কহিলেন কাকার কর্মচ্যুতির কথা! কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে কোরবানিকালীন কাকার কর্মচ্যুতির কাজটা করাই কঠিন। কেননা কেসটা কোভিড করোনার। কারখানার ক্যাশিয়ার কৌরব কীর্তনিয়া কাকারই কাছের কুটুম্ব। কুটুম্বিতার কারণে কৌরবই কেবল কাকাকে কিছুটা করুণা করিয়া কথা কহিলেন।

কারখানার কল্যাণে কাকা কত কষ্ট করিয়া কত কিছু করিয়াছেন। কোনো কিছুতেই কার্পণ্য করেননি। কিন্তু কাকার কষ্টের কদর কোথায়? কাকা কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছে করোনাকালীন কিছু কুশলই কামনা করিয়াছিলেন। কিন্তু কুসঙ্গ করিয়া কুশল কামনা কয়জনে করে! কেউ কেউ কাকার কর্মদক্ষতায় কৃপা করিয়া কাকাকে কয়েকটি কথা কহিলেও কলহপ্রিয় কয়েকজন কলিগ কহিলেন কারাবাসের কথা, কয়েকজন কহিলেন কোয়ারেন্টিনের কথা।
কাশিতে ক্লান্ত কাকার কণ্ঠে কেবল করোনার কনকনে কাঁপুনি। কোনোমতে কর্তৃপক্ষের কাছে কাতরকণ্ঠে করজোড়ে কাঁচুমাচু করিয়া কিছু কাকুতি করিলেন। কিন্তু কিছু কুচক্রীর কানকথায় কর্তৃপক্ষ কাকার কপালে করোনার কোপের কথাই কহিলেন। কাকার কোনো কাকুতিই কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করিলেন না।

কোম্পানিরই কো-অর্ডিনেটর কুর্মিটোলার কীটতত্ত্ব কেন্দ্রে কথা কহিয়া কনফার্ম করিলেন, ‘কাকার কাশিটা করোনার কারণেই’। ‘কীভাবে কাকা করোনাক্রান্ত’—কর্তৃপক্ষ কাকাকে কৈফিয়ত করিলেন। কোথাও কি কোলাকুলি কিংবা করমর্দন করিয়াছেন? কাকা কথাহারা। কাজেই কর্তৃপক্ষ কঠিন কাজটাই করিলেন! কাঁচা কাজ কখনোই করেননি। কর্মচঞ্চল কাকাকে করিলেন কর্মচ্যুত! করোনার কারণে কারখানাতে কিছু কর্মচারীকে কায়দা করিয়া করিলেন কাটছাঁট, কমাইলেন কর্মঘণ্টা, কমাইলেন কর্মদিবসও। করোনাতঙ্কে কমিল কর্মসংস্থানের কলেবর। কর্মী কমানোর ক্ষোভে কিছু কর্মচারী করিল কর্মবিরতি। কর্মী–সংকটের কারণে কারখানায় কাজ করেন করোনাক্রান্ত কর্মঠ কর্মীরা। কেননা করোনাকালে কৃচ্ছ্র সাধনে কর্মীবান্ধব কৌশলই কর্তৃপক্ষের কাম্য। করোনার কারণে কারখানার কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে ক্লান্তিলগ্নে! কমিয়াছে ক্রেতা, কাগজের কাটতিও কম, কষ্টের কদর কেবল কাফনের কাপড়ের। কিন্তু কোনো কর্মপরিকল্পনা কিংবা কৌশলই করোনা কমানোতে কাজ করিতেছে না। করোনার ক্ষিপ্রতায় কারবারিরা ক্ষণে ক্ষণেই কাগজের কাড়াকাড়ি করিতেছেন।
কারখানার কল্যাণে কাকা কুশলী কর্মতৎপরতায় কোমর কষিয়া কর্মীদের কাতুকুতু করাইয়া কত কার্যসিদ্ধি করিলেন কিন্তু করোনার কারণে কাকা কাঠগড়ায়! কারখানার কালের কান্ডারি কাকার ক্রান্তিকালে কঞ্জুস কর্তৃপক্ষ কাকাকেই করিল কর্মচ্যুত!
কত কঠিন কর্মিষ্ঠ কাকার কর্মজীবন! কেষ্ট কপাল কারে কয়! কেবল কয়েকটি কাশির কারণেই কর্মোদ্যম কাকা কথিত কর্মদোষে কার্যত কর্মহীন। কাজেই কৃতজ্ঞ কাকা কাষ্ঠহাসিতে কর্তৃপক্ষের কুশল কামনা করিয়া কারখানাকে করিলেন কুর্নিশ—কাকির কুটিরে কোয়ারেন্টিনকেই করিলেন কবুল।

কারখানার কয়েক কিলোমিটারের কাছাকাছি কুমুদের কিনারে কাকির কংক্রিটের কুটির। কুমুদে কানায় কানায় কচুরিপানা, কাছাড়ে কচু, কলমিলতা। কাছেই কপিকলযুক্ত কুয়া। কুটিরটি ক্রিস্টাল কার্পেটিংয়ের কিন্তু কাছেই কর্দমাক্ত কাশবনের কারণে কুটিরের কয়েকটি কক্ষের কোনায় কোনায় কেঁচো-কাঁকড় করে কিলবিল! ক্ষণান্তরে কুটিরের কলাপসিবল কপাটে কাকি ‘কোয়ারেন্টিনে কাকা’ কথাটি কালিবদ্ধ করিলেন। কাছেই কান্তার কাননে কয়েকটি কঞ্চিতে কমলা কালারের কোয়ারেন্টিনের কেতন। কিন্তু কাজপাগল কাকা কতকাল কোয়ারেন্টিনে কাটাইবে, কোয়ারেন্টিনে কী করিবে, কোয়ারেন্টিন কাটিলে কী করিবে—কল্পনায় কত কী! কুচিন্তার কুণ্ডলীতে কুঞ্চিত কাকা কালেকশন করিলেন কয়েকটি কড়ই কাঠের কেদারা; কিনিলেন কয়েক কেজি কিশমিশ, কালোজিরা। কালোজিরা কিনা কাশিতে কার্যকর। কিনিলেন কয়েক কাঁদি কাঁচকলা, কিছু কমলা, কালোজাম, কাঁচালঙ্কা, কিছু কামরাঙাও। কারও কারও কথামতে করোনার কনকনে কাঁপুনি কমানোতে কামরাঙাও কিছুটা কাজ করে।

কাকার কলিজা—কাকির কিছু কিছু কথা, কোনো কোনো কাজ, কাকারই কথা—কাজের কার্বন কপি। কোয়ারেন্টিনে কাকিই কাকার কেয়ার করেন। কবজিতে কাকার করোনার কবিরাজি কবচ। কাব্যরসিকরা কোয়ারেন্টিনকালীনে কাকা কাকির কথোপকথনে কৌতুক করিয়া কহেন, “কপোত-কপোতী করিতেছে কেলি, কাহার কুঞ্জ কাননে?” কানপাতলারা কাকা-কাকির কলহাস্য কার্যকলাপে কেবলই করে কানাঘুষা।
কাকার কাশি কিংবা কাঁপুনি কিন্তু কোনো কিছুতেই কমিতেছে না। কাশিতে কাকার কণ্ঠরুদ্ধ, কমিয়াছে কর্মস্পৃহা, কোমরব্যথায় কাহিল, কবজিতেও কমজোর। ক্ষীয়মাণ কাকার কণ্ঠ! কুচিন্তায় কুক্ষিগত কষ্টের কোয়ারেন্টিন—কালনাগিনীর কামড়ের কষ্টকেও কটাক্ষ করে! কোয়ারেন্টিনকে কেউবা কহেন কোভিডে কারাবাস! ক্রমাগত কোয়ারেন্টিনে কাকা কপর্দকহীন। কালাতিপাতে কষ্ট কমানোর কামনায় কাকা কুটুম্ব কৌরবের কাছে কর্জ করিলেন কিছু ক্যাশ। কাকা কিন্তু কোনো কষ্টের কথাই কহি কহি করিয়াও কারও কাছেই কহেননি। কাকিও ক্ষান্ত করিলেন কষ্টের কথা কওয়া। কহিলেই কাজ কী। কে কাঁদিবে কাকার কষ্টে; কে কমাবে কোভিডে কষ্টের ক্ষত।

কারখানার কর্মব্যস্ত কাকা কুটিরের ক্ষণস্থায়ী কামরায় কর্মহীন কোয়ারেন্টিনে কালাতিপাত করিতেই ক্লান্ত! করোনার কশাঘাতে ক্ষুধার কাতরতায় ক্রমাগত কাহিল কিন্তু কল্পনায় কেবল কারখানারই কাজের কথা! কাঠখোট্টা কোম্পানি কপটতা করিলেও কাকা কিন্তু ক্রেতান্বেষণ করিয়া কাগজের কাটতিই কামনা করিতেছেন।
কমিয়াছে কাকার কাশি, কাছিয়াছে কষ্টের কোয়ারেন্টিনের কাল। কিন্তু কয়েক দিনের কোয়ারেন্টিনেই কাকার কত করুণ কিচ্ছা, কত কষ্টের কাহিনি! কত কাষ্ঠ কয়লা করিয়া কাকার কর্মযজ্ঞের কুসুমিত ক্যারিয়ার—কালের করোনায় করিল ক্রাশ! কেউ কেউ কাকার কপালকে কষিতে কহিলেন কষ্টিপাথরে। কিন্তু কাকার কেন কেষ্ট কপাল! কাকা তো কারো কোনো ক্ষতি করেননি। কোথায় কড়ি, কোথায় কাঞ্চন! করোনার ক্ষিপ্রতায় কত কারবারিই না ক্ষতিগ্রস্ত! কুলায় কাঁপিছে কুড়িটি কালের কপোত–কপোতী। কুদিনের কষ্টে কূল-কিনারাহীন কাকিরও কাঁপা কলকণ্ঠ কেবলই কাঁদো কাঁদো। কাকার কত কামনার কাকির কপোল, ক্ষণে ক্ষণেই কাকির কান্নায় কাজলধারার ক্লেদে ক্লিষ্ট!
কত কৃতঘ্ন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ!

কুকুরের কাজ কুকুরেই করিয়াছে কামড়াইয়াছে কাকাকে; কিন্তু কাকা কেন কুকুরকে কামড়াইবে? কাকা কিন্তু কুকুরের কুশলই কামনা করিলেন।

কাব্যপ্রকাশেই কবির কৃতিত্ব। কিন্তু কবির কলমের কালি কেবল কারও কীর্তিগাথার কীর্তনই করে না, কখনো কখনো কারও কষ্টের কথাও কয়! করোনাকালে কারও কারও কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ কাউকে কাউকে কর্মবিমুখ করিলেও, কর্মচঞ্চল কাকাকে কাবু করেনি; কর্তৃপক্ষের কাশিকেন্দ্রিক কিছু কঠিন কর্মকাণ্ডই কর্মবীর কাকাকে করিয়াছে কাবু, করিয়াছে কঙ্কালসার—করিয়াছে কপর্দকহীন। কয়েক দিনের কোয়ারেন্টিনেই কেশরী কাকার কেশহীন করোটি। কেউ কেউ কহেন, করোনাকালীন কারখানা কমপ্লেক্সে কথিত কুলক্ষণের কয়েকটি কাশিই কাকার কূলকিনারাহীন কষ্টের কারণ! কিছু কুৎসাকারী কহিলেন, কিচ্ছাটি কাকার করস্পর্শে করা কর্মের কুফল!

কথাগুলো কোভিড করোনাকে কেন্দ্র করিয়া কল্পিত কিছু করুণ কিচ্ছা! কতজনে কত ক্লেশে কর্মাধুর্য কথামালার ‘ক’ কাহিনির কীর্তন করিলেন! কিন্তু কেউ কি কখনো কল্পনা করিয়াছেন, করোনাতে কবেকার কিছু কল্পিত কাহিনিও কালান্তরে কাউকে কাউকে কারণহীন কান্নায় কুরে কুরে কাঁদাইবে!

* লেখক: অসিত বরণ সরকার, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।