প্রাণের টানে মিলল সবাই

প্রকৃতি ঘেরা সবুজ শ্যামল ১৭৫ একর ক্যাম্পাসে প্রাণের টানে মিলল একঝাঁক সাবেক শিক্ষার্থী। অ্যালামনাইদের বর্ণিলভাবে বরণ করে নেয় বিভাগটি। রংবেরঙের বাতির আলোয় রঙিন হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন প্রাঙ্গণ। বিভাগের আঙিনাকে আলপনা আর ক্যালিগ্রাফিতে সজ্জিত করে তুলে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রথম পুনর্মিলনীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান, আড্ডা, ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে ঘুরে বেরিয়ে সময় কাটান প্রবীণেরা। ক্যাম্পাসে ফেরাকে বহুদিন পর নিজ ঘরে ফেরার মতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সবাই।

একদল সুরের মূর্ছনায় গাইছে, আরেক দল আড্ডায় মেতেছে আবার কেউ কেউ হারিয়ে গেছেন সোনালি স্মৃতির রাজ্যে। অনেকে স্ত্রী-সন্তানকেও নিয়ে এসেছেন প্রিয় বিদ্যাপীঠে। বন্ধুবান্ধবীর সঙ্গে পরিচয় ও ক্যাম্পাসজুড়ে ঘোরাঘুরির মধ্য দিয়ে কাটে তাঁদের মধুর সময়।

দিনব্যাপী এই আনন্দযজ্ঞের শুরু হয় গতকাল শনিবার (১৮ মার্চ) সকালের নাশতা দিয়ে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করা হয়। র‍্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টিএসসিসিতে এসে মিলিত হয়। পরে আলোচনা সভা, মধ্যাহ্নভোজ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সবাই ফিরে নিজ গন্তব্যে।

বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শহীদ মুহাম্মদ রেজওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম।

দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ইকবাল হোছাইনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যজ্ঞ অধ্যাপক মো. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, বেসরকারি শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু, থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক এইচ এ এন এম এরশাদ উল্লাহ, বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ অলী উল্যাহ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট-এর মহাপরিচালক এম আবদুল আজিজ।

স্মৃতিচারণা করে দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, বর্তমানে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রেস প্রকাশনা দপ্তরের উপপরিচালক মো. সামছুল আলম (শিবলী) জানান, ‘পুনর্মিলনী উপলক্ষে সব শিক্ষাবর্ষের অ্যালামনাইরা একত্রিত হতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। এ মিলনমেলায় বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও প্রাণবন্ত মিলনমেলা হবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সাবেক আরেক শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইবির প্রতিষ্ঠাকালীন দা’ওয়াহ বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা প্রায় ৩৫টি ব্যাচ একসঙ্গে হতে পেরেছি। বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক এবং যাঁরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’

অ্যালামনাই অনুষ্ঠানে এসে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী, বর্তমানে ঢাকা ক্যাডেট মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মো. কোরবান আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর নিজ বিভাগের মিলনমেলায় আসতে পেরে অনেক আনন্দিত। এ রকম পুনর্মিলনী আমাদের মাঝে প্রাণের সঞ্চার করে। বন্ধুদেরকে কাছে পেয়ে পুরোনো স্মৃতিতে চলে গিয়েছি।’

এ ব্যাপারে দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর মো. ইকবাল হোছাইন জানান, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের অ্যালামনাইদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’
এ বিষয়ে দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. মোহাম্মদ অলী উল্যাহ বলেন, ‘সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী উৎসব সম্পন্ন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’

*লেখক: মুরতুজা হাসান, শিক্ষার্থী, ইবি।