শুভ জন্মদিন, আইয়ুব বাচ্চু
আপাদমস্তক সংগীতপ্রাণ মানুষ বলতে যা বোঝায়, আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন তেমনই একজন। সংগীতে খান, সংগীতে বাঁচেন, সংগীতে ঘুমান—এমন ধরনের। গিটার ছিল তাঁর সবচেয়ে আপন। সবচেয়ে কাছের সঙ্গী। সংগীতই ছিল তাঁর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।
মা, দেশমাতৃকা ও সংগীতের ব্যাপারে সব সময় আপসহীন ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। মা ছিলেন তাঁর সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষ। তবে মাকে তিনি যতটা ভালোবাসতেন, তার চেয়ে কোনো অংশে কম ভালোবাসতেন না এই বাংলাদেশকে। মায়ের মতো বাংলাদেশেরও স্থান ছিল তাঁর হৃদয়ের গহীনে। দেশটাকে তিনি আক্ষরিক অর্থেই নিজের মায়ের মতো করে দেখতেন।
আইয়ুব বাচ্চু প্রচণ্ড স্বপ্নবাজ একজন মানুষ ছিলেন। বেঁচে থাকতে বাংলাদেশকে নিয়ে বড় বড় স্বপ্ন তিনি দেখেছেন। স্বপ্নগুলো শুধু বড় নয়, দুঃসাহসিকও বটে৷ তাঁর এ স্বপ্নগুলো গড়ে উঠত বাংলাদেশকে ঘিরে এবং ব্যান্ড সংগীতকে কেন্দ্র করে। তিনি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে রাস্তা বন্ধ করে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে একটা ঐতিহাসিক কনসার্ট আয়োজন করার স্বপ্ন দেখতেন। যে কনসার্টে দেশি ব্যান্ড শিল্পীদের সঙ্গে একই মঞ্চে বাজাবেন নামকরা বিদেশি শিল্পীরাও।
আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্নের সেই কনসার্টে ইয়ান পেইস ‘মাধবী’ বা ‘গতকাল রাতে’ বাজাবেন, স্টিভ ভাই ও জো স্যাট্রিয়ানি বাজাবেন ‘ঘুম ভাঙা শহরে’ ও ‘দুঃখিনী দুঃখ কোরো না’। তাঁদের সঙ্গে জেমসকে নিয়ে গিটার বাজাবেন তিনি নিজে। সে সঙ্গে বেজ বাজাবেন বেজবাবা সুমন এবং কি-বোর্ডে থাকবেন মানাম আহমেদ।
ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের একটা নতুন পরিচয় তৈরি করার স্বপ্ন সব সময় দেখে গিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত বিদেশিদের মধ্যে ছড়িয়ে সেখানে আমাদের ব্যান্ড সংগীতের একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করার লক্ষ্যে বিভোর ছিলেন তিনি। তাঁর আজীবনের স্বপ্ন ছিল বিশ্বমঞ্চে বাংলা ব্যান্ড সংগীতের মাধ্যমে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করা। বাংলা গানের বিশ্বায়নই ছিল তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে ২০১৫ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘যদি মেটালিকা টিকে থাকে, যদি মেগাডেথ টিকে থাকে, ড্রিম থিয়েটার, স্ক্রিড রো, আয়রন মেইডেন ও আরো বড় বড় যেসব ব্যান্ড রয়েছে তাঁদের সঙ্গে বাংলাদেশটাও ঢুকে যাবে একই মঞ্চে। আমার মনে হয়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই তা হয়ে যাবে।’
এটা ছিল আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্ন ও বিশ্বাস। এই বিশ্বাসটা যদি এখনকার শিল্পীরা মনেপ্রাণে ধারণ করতে পারেন, তাহলে নিশ্চয় সে স্বপ্নটা একদিন না একদিন পূরণ হবেই।
জীবদ্দশায় আইয়ুব বাচ্চু একটা কথা সব সময় বলতেন। তিনি বলতেন, ‘আমি গান গেয়ে বাংলাদেশকে জাগিয়ে রাখতে চাই।’ আজ তিনি নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ঠিকই জেগে আছে এবং জেগে থাকে তাঁর গানে। আমরা জেগে থাকি তাঁর গান শুনে। বিনিদ্র রজনি কাটাই তাঁর ছয় তারের জাদুতে মোহাবিষ্ট হয়ে৷
এভাবেই বেঁচে থাকুক আমাদের আইয়ুব বাচ্চু; এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।
শুভ জন্মদিন, মায়েস্ত্রো!