স্বপ্নে বিচরণ

চিঠিঅলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

প্রিয়,

কেমন আছ তুমি?

সব সময় তোমার শুভকামনায়...

অনেক দিন তোমাকে চিঠি লেখা হয় না। মনে করো না যে তোমাকে ভুলে গেছি কিংবা উত্তর দাও না, তাই লিখি না। এমনটা মোটেও নয়।

আসলে ইদানীং জীবন নিয়ে বেশ ভাবছি। দার্শনিক ভাবনা। হাহাহা..

গত রাতে সিগমুন্ড ফ্রয়েড সাহেবকে স্বপ্নে দেখলাম। ভদ্রলোক যদিও সাইকিয়াট্রিস্ট, তবু তাঁর তত্ত্বগুলো বেশ জটিল। দার্শনিকের মাথাও ওলটপালট করে দিতে পারে, এমন সব তত্ত্ব!

আরও ঘটনা আছে। এই যেমন হঠাৎ সেদিন আবিষ্কার করলাম জীবনটা উস্তা করলার মতো। বেশ তেতো কিন্তু অতিমাত্রায় পুষ্টিগুণসম্পন্ন!

যা–ই হোক, ইদানীং আমি কিন্তু বেশ খোশমেজাজে থাকি। বলতে পারো ‘Happy Mood’। এটা পড়ে আবার ঈর্ষা করো না। অবশ্য আমার আগের দেওয়া চিঠিগুলোতে লেখা কষ্টগুলো কিংবা সুখগুলোর কথা যদি তোমাকে একটুও ভাবায় তবে এখন তুমি একটু ঈর্ষান্বিত হতেই পারো! এটা ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠছে...

সে যা–ই হোক, আমার মন খারাপের দিন কিংবা ভালো লাগার দিন, প্রতিটি দিনেই তোমার ভাবনা আমার সঙ্গী। কারণ—

‘যদি হিমালয় আল্পসের সমস্ত জমাট বরফ

একদিন গলেও যায়, তবুও তুমি আমার।’

শোনো, আজকাল আমার হুট করেই একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি কিছুদিন ধরে অফিসের কাছেই একটা ছাপরা হোটেলে দুপুরে খাই। ওখানে মূলত রিকশা-গাড়ির ড্রাইভাররা খায়। হোটেলের মালিক কাম ম্যানেজারের ঘর দোতলায়। ওনার স্ত্রী রান্না করে নিচে পাঠায়। তাই চলে হোটেলে। ভদ্রমহিলার রান্না আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। আমি রান্না ভালোই পারি এবং নিজে রান্না করেই খাই, তারপরও ওনার রান্না দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিচ্ছি।

আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি...

তোমার রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ মনে করে! হাহাহা!

তোমাকে আজ যখন চিঠি লিখছি বিকেল ৫টা বেজে ৪৪ মিনিট। এক্সপ্রেস ট্রেন তুমুল বেগে এগোচ্ছে ঘন সবুজ বনের হৃদ্‌যন্ত্র চিরে।

অঝোর বৃষ্টি...

ট্রেনের নিরন্তর ঝিকঝিক আর বৃষ্টির রিমঝিম। মাঝে মৃদু বজ্রপাত—

গিটারের টুংটাং আর ড্রামসের দ্রিম দ্রিম ছন্দ মিলে যেমন চরম সুন্দর মেলোডি তৈরি করে, কানে বাজছে যেন সেই শব্দ...

শিহরণের তুঙ্গে উঠে গিয়েছে মন।

নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

কালো মেঘ ভেঙে নামা ঝুম বৃষ্টিতে ঘন সবুজ পাতাগুলোকে আরও কালচে ঘন ঘোর লাগছে। কল্পনা আর অনুভূতি যেন আমাকে নিয়ে গেছে গহিন আমাজনের আজও পদচিহ্নহীন কোনো স্থানে!

যাচ্ছি কোথায় তা না হয় না–ই বললাম। তবে তোমাকে একটা ক্লু দিতে পারি—

‘আমার অনেক দিনের স্বপ্ন একটা পাহাড় কেনার।’

সেই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলা সরু একটা নদী। পাখির চোখে তাকালে বড় বড় গাছের ডালপালার আড়ালে লুকিয়ে থাকা সেই নদীর স্বচ্ছ পানি দেখা যাবে।

এবার বলো তো, কেমন বাড়ি তোমার পছন্দ?

মন বলে—তোমার পছন্দ একটা আবলুস কাঠের বাড়ি। যার মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত থাকবে হালকা সবুজাভ কাচের ফ্রেম। বসার ঘরের রকিং চেয়ারটায় কড়া কালো কফির মগ হাতে নিয়ে দুলতে দুলতে অনায়াসেই তুমি ঝুম বৃষ্টি উপভোগ করতে পারবে। কালো আঁধারে ঢাকা সেই মুহূর্তে পাশের ফায়ার প্লেসে কাঠ-কয়লায় জ্বলতে থাকা গনগনে আগুন হলুদ-কমলা রঙের আভা সৃষ্টি করবে। সে আগুন শুধু আলো নয়, ছড়াবে একরাশ উষ্ণতাও...

ওদিকে হালকা বজ্রপাতের আলোতে বাইরের ঝুম বৃষ্টিতে ঝাউগাছগুলোর ত্রিভুজাকার শীর্ষ দৃশ্যমান হবে।

হঠাৎ মেঘের তীব্র গর্জনে তুমি কেঁপে উঠবে। আঁকড়ে ধরার জন্য আমি তোমার পাশেই থাকব।

একটু নয়, যতটা উষ্ণতা তোমার লাগবে, তার সবটাই তুমি পাবে।

বাড়বে রাত...সঙ্গে বাড়বে উষ্ণতা...

তারপর তুমি ঘুমিয়ে পড়বে। বৃষ্টি ভেজা ভোরের প্রথম আলোয় তোমার নিদ্রিত মুখাবয়ব আমাকে আবার রাতের উষ্ণতার স্বপ্ন দেখাবে।

আমি দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখব। স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাব...

আমার সেই স্বপ্ন জুড়ে থাকবে শুধু ‘তুমি’।

ইতি

তোমার ‘আমি’

লেখক: রবিউন নাহার তমা, মিরপুর, ঢাকা। mail-rn.toma243@gmail