মুরারিচাঁদে নবীনবরণের দিন: এক নতুনতার উচ্ছ্বাস

ছবি: লেখকের পাঠানো

সকাল থেকেই মনের মধ্যে ছিল আলাদা এক ভালো লাগা। ভালো লাগা হওয়ারই কথা। কেননা, ১ ডিসেম্বর আমাদের সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ কলেজ (এমসি কলেজ)–এর ইতিহাস বিভাগের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠান। আগে আয়োজনটি হওয়ার কথা থাকলেও পরে অনুষ্ঠিত হওয়ায় একটা সুবিধাই হয়েছে। এরই মধ্যে বিভাগে সবার সঙ্গে বেশ সখ্য গড়ে উঠেছে।

নবীনবরণ মানেই নতুনত্বের হাতছানি ও জীবনের স্মৃতিময় এক বিশেষ মুহূর্ত। আগের রাতেই কল্পনা করছিলাম, কেমন হবে দিনের আয়োজন। তাই সকাল থেকে মনে ছিল অদ্ভুত এক উচ্ছ্বাস।

বাসা থেকে প্রস্তুত হয়ে বের হয়ে পৌঁছালাম শাহী ঈদগাহে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর সিএনজিতে চেপে রওনা হলাম। প্রায় ১০ মিনিট পর এসে নামলাম টিলাগড়ে ১৩৩ বছরের গৌরবময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমাদের মুরারিচাঁদ কলেজে। সবুজে ঘেরা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিভাগের দিকে এগোতে লাগলাম। কলাভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও পুকুর—সব পেরিয়ে যখন বিভাগের মূল সড়কে পৌঁছালাম, তখন এক চোখধাঁধানো দৃশ্য!

ছবি: লেখকের পাঠানো

রঙিন কাগজে সাজানো পুরো বিভাগ যেন উৎসবের আবহে আলোকিত। বিভিন্ন রঙিন কাগজ, নকশা, ফ্রেম ও ‘মনের দেয়াল’—সবকিছু দিয়ে সজ্জিত বিভাগের প্রাঙ্গণ। বাইরে শাওন দা, মারজান আকরাম ভাইদের ছবি তুলতে দেখলাম। আমাদের ব্যাচের কয়েকজনও বাইরে দাঁড়িয়ে গল্পে মশগুল। সবাই বেশ সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে এসেছে আজ।

হলরুমে ঢুকতেই চোখে পড়ল আরও চমৎকার সাজ। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানের পুরো পরিবেশটাই যেন অন্য রকম এক উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছিল!

খানিক বাদেই শুরু হলো বহুল প্রতীক্ষিত নবীনবরণ। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে সূচনা। এরপর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত। বিভিন্ন ব্যাচের ভাই ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। অন্য বিভাগের শিক্ষকেরাও আমাদের নবীনবরণে উপস্থিত ছিলেন। বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পান্না বসু ম্যাম বলেন, ‘নিজের বিভাগকে ভালোবেসে পড়তে হবে, পরিশ্রমই সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি।’

ছবি: লেখকের পাঠানো
নাগরিক সংবাদে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই–মেইল: [email protected]

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আবুল কালাম আজাদ স্যার বলেন, ‘নীতির কথা শুধু বলাতে নয়, নিজেকেও তা পালন করতে হবে।’ আমাদের বিভাগীয় প্রধান ইমতিয়াজ তানভীর স্যার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করলেন।

প্রথম পর্ব শেষে দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হলো। খাওয়া শেষে বাইরে বের হয়ে হাঁটাহাঁটি, ছবি তোলাসহ নবীনবরণের আনন্দ যেন প্রতিটি মুহূর্তে মিশে ছিল।

দ্বিতীয় পর্বে শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা, গান, আবৃত্তি, স্ট্যান্ড–আপ কমেডি, সবই ছিল প্রাণবন্ত! আমাদের ব্যাচের সম্রাট ও মিনহাজ দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। মুরারিচাঁদ কবিতা পরিষদ, থিয়েটার মুরারিচাঁদ সবাই অসাধারণ পরিবেশনা উপহার দিয়েছে।

সকালে যে ‘মনের দেয়াল’–এ মাত্র কয়েকটি লেখা ঝুলছিল, বিকেলের মধ্যে তা ভরে ওঠে রঙিন অনুভূতিতে। আমিও লিখে এলাম নিজের ছোট্ট অভিব্যক্তি। অবশেষে রোমাঞ্চকর এক নতুন অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করলাম। জীবনের স্মৃতির খাতায় আজকের দিনটি নিঃসন্দেহে বিশেষ হয়ে থাকবে।

*লেখক: আবীর আল নাহিয়ান, শিক্ষার্থী, এমসি কলেজ, ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষ