সিরাজগঞ্জের রসুলপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে ২১ বছর পর বন্ধুদের মিলনমেলা

ছবি: লেখক

বন্ধুত্ব মানেই জীবনের সবুজতম সম্পর্ক। ‘বন্ধু’ ছোট এ শব্দের মধ্যে মিশে আছে যেন পৃথিবীর সব নির্ভরতা। আত্মার কাছাকাছি যে বাস করে, সে–ই বন্ধু। সুসময় কিংবা অসময়ের সঙ্গী। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই বন্ধুত্বের কদর করেন। বলা হয়ে থাকে, যদি বন্ধু হও, হাতটা বাড়াও।

সেই হৃদয়ের আহ্বানে মিলেছে সব বন্ধুর হাত। সত্যিকার অর্থেই বন্ধুত্ব এক অদ্ভুত সম্পর্কের নাম। রক্তের হয়তো কোনো লেনদেন থাকে না এ ক্ষেত্রে, তবু সে সম্পর্কের চেয়েও বেশি আবেগের হয়ে ওঠে বন্ধুত্ব।

ভার্চ্যুয়াল জগতে বন্ধুত্বের যেমন কদর কম থাকে, তেমনি সম্পর্ক হয়ে থাকে একেবারে ঠুনকো। কিন্তু বাস্তব জীবনের বন্ধুত্ব বা স্কুলের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে নিঃস্বার্থভাবে। সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের জন্য ২১ বছর পর এক হলেন ঐতিহ্যবাহী রসুলপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের ২০০২ সালের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঐতিহ্যবাহী স্কুলমাঠের বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তাঁরা। তাঁদের কেউ প্রকৌশলী, কেউ গৃহিণী আবার কেউ সরকারি চাকরিজীবী। প্রায় ২১ বছর পর একে অন্যের সঙ্গে দেখা। তাই হাসি, গান আর আড্ডায় তাঁরা যেন ফিরে যান সেই স্কুলজীবনে। তাঁদের এ আড্ডা দেওয়া থেকেই বোঝা যায় তাঁদের বন্ধুত্বের গভীরতা।

ছবি: লেখক

গত রোববার সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী রসুলপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে হাজির হন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা স্কুলজীবন শেষ করেছেন ২০০২ সালে। এরপর কাজের ব্যস্ততায় আর বন্ধুদের দেখা হয়নি।

স্ত্রী সুমাইয়া ইসলাম ও সন্তান র‍াইয়ানকে নিয়ে স্কুলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসেছেন তানভীর রহমান হীরা। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোরেলের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত। স্কুলজীবনের বন্ধুদের কাছে পেয়ে তিনি বললেন, ‘একসঙ্গে পুরোনো বন্ধুদের দেখে খুব ভালো লাগছে। সবার সঙ্গে আড্ডা দিয়ে মন ভরে গেল। কিছুক্ষণের জন্য আমরা আবার সেই পুরোনো দিনে ফিরে গেছি।’

সকাল থেকে এমনই আড্ডা, স্মৃতিচারণা ও নানা অনুষ্ঠানে সারা দিন উৎসবমুখর ছিল স্কুলের ক্যাম্পাস। স্কুল ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে।

মোছা. মাকসুদা খাতুন বলেন, ‘সেই কবেকার কথা। আমাদের সেই আড্ডার মাঠ, গল্পের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। আজ অনেক বন্ধুকে পেয়েছি। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আবার একত্রিত হতে পারব, তা কখনো চিন্তা করিনি। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা তানভীর, সাজ্জাদ রহমান, স্বদেব চন্দ্র সূত্রধর, সোহাগ, জাহাঙ্গীরসহ যাঁরা এমন একটি সুন্দর দিন উপহার দিয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। তবে এ রকম অনুষ্ঠান যাতে ভবিষ্যতে হয়, সেই প্রত্যাশা করি।’

ছবি: লেখক

ব্যাংকার সাজ্জাদ রহমান ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট স্বদেব চন্দ্র সূত্রধরের কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘এ অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ফেসবুকে মোটামুটি সবার সঙ্গে যোগাযোগ হয়, কিন্তু সময়ের অভাবে আমরা বন্ধুরা কেউ সরাসরি এক হতে পারিনি। পুনর্মিলনীতে সেই সুযোগ পেয়েছি, এতে আমার ভালো লাগছে, দীর্ঘ ২১ বছর পরে সবাই এক হয়েছি।’

নওগাঁ জেলায় পুলিশের এএসআই পদে কর্মরত রফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি উপেক্ষা করে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা ও আড্ডা দেওয়ার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আসতে পেরে তাঁর খুবই ভালো লাগছে।

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ও পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম বিপ্লব কুমার, সাবেক ও বর্তমান ২২ জন শিক্ষককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।

ছবি: লেখক

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সরকার মো. ফজলুল করিমের সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় স্কুলমাঠে বানানো মঞ্চে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছাকমান আলী, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমি সুপারভাইজার আনন্দ কুমার মণ্ডল প্রমুখ।