বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর অনেকে নিজের গতি ও স্পৃহা হারিয়ে ফেলেন কেন
যুদ্ধের সমান একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কিংবা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থী মেধাবী, এ বিষয়ে কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। ব্যক্তিগতভাবে একটি বিষয় লক্ষ করে দেখেছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীই নিজের গতি ও স্পৃহা হারিয়ে ফেলেন। অবশ্য নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে উঠতে সময় লেগে যায় আর সবার অভিযোজন–সক্ষমতাও এক নয়। অধিকন্তু, প্রথম বর্ষে বা প্রথম সেমিস্টারে সহপাঠীদের অনেকের বৈচিত্র্যময় প্রতিভা যখন প্রস্ফুটিত হতে থাকে, তখন কিছু শিক্ষার্থী নিজেকে তাঁদের সঙ্গে বিচার করতে থাকেন।
ক্লাসে সহপাঠীদের কারও কারও রেসপনস করা, বক্তব্য দেওয়া, কবিতা আবৃত্তি বা ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজিতে কথা বলা দেখে অনেকেই নিজেকে তাঁদের সঙ্গে তুলনা করতে থাকেন এবং দিন শেষে হতাশায় নিমজ্জিত হতে থাকেন। রাতে ঘুমানোর সময় কিংবা সময়ে-অসময়ে স্বগতোক্তি করেন, ‘আমাকে দিয়ে হবে না’, ‘আমি ওদের মতো অভিজ্ঞ নই’, ‘আমার কোনো গুণ নেই’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক সুপ্ত প্রতিভা এভাবেই অঙ্কুরে বিনষ্ট হয় এমন ভাবনার কারণে। তাই এ রকম চিন্তাভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য খুবই হতাশাজনক এবং ধ্বংসাত্মক। এমন চিন্তাভাবনার কারণে একজন শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন না, বরং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর কখনোই সহপাঠীর সঙ্গে তুলনা করে নিজেকে অপদার্থ ভাবাটা উচিত বা যুক্তিসংগত নয়। কারও সঙ্গে নিজেকে তুলনা না করে নিজের ভেতরে থাকা সুপ্ত মেধা খুঁজে বের করে সেটার ওপর কাজ করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যই প্রাচীন গ্রিসের প্রসিদ্ধ দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, ‘নিজেকে চেনো’, কথাটির গভীরতা অনেক। নিজেকে কেউ চিনতে পারলে তিনি আর অন্য কাউকে নিজের সমকক্ষ ভাববেন না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়–জীবনের প্রথম বছর এ রকম হতাশাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কারও জন্য এ অভিজ্ঞতা আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়, আবার কারও জন্য অভিশাপ। সে জন্য নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হওয়া দরকার, শাণিত করা দরকার দুর্বল জায়গাগুলো। এ ছাড়া নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হওয়া ও বিভিন্ন রকম সফট স্কিল অর্জন করা উচিত। নিজেকে সহপাঠীদের সঙ্গে তুলনা না করে সহপাঠীরা যেভাবে নিজেদের দক্ষতা সবার সামনে উপস্থাপন করছেন, সেই কলাকৌশল রপ্ত করে নিজেও সেভাবেই উপস্থাপন করা কিংবা ভিন্নতা এনে সেটা সবার সামনে আরও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা একজন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান শিক্ষার্থীর অনন্য বৈশিষ্ট্য। আর নয় হতাশা কিংবা অন্যের সঙ্গে তুলনা। আজ থেকে নিজের ‘আমি’-কে চিনি। ইতি হোক সব নেতিবাচক চিন্তাভাবনার, অঙ্কুরিত হোক শত শত প্রতিভা।
লেখক: ইসমাইল হোসেন ইমরান, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়