ফেরা

আব্বার সঙ্গে আমাদের দেখা হলো প্রায় এক যুগ পর, বেশ কয়েক দিন ধরে আম্মার জ্বর শুনে দেখতে এসেছিল গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। তিনি পৃথিবীর কোন শহরে, কোন রোডের, কত নম্বর বাড়িতে থাকে, আমরা কেউই আসলে  জানি না। আব্বার ব্যক্তিগত ডায়েরিটা হারানোর পর তার খোঁজ কেউ দিতে পারেনি।

তার পরিবারের সবার বড় ছেলে—হারুন ভাই আব্বাকে দেখেই বলল, আব্বা কিছু খাবে? বুটের ডাল দিয়ে খাসির মাথা রান্না করতে বলি তোমার জন্য?

আব্বা রেগেমেগে বলল তুই সর সামনে থেকে, গাধা কোথাকার—হারুন ভাই কাচুমাচু অবস্থা।

মেজভাই, মানে মামুন ভাইকে দেখলেই  আব্বার রাগ আগুন থেকে পানি হয়ে যায় বরাবরই;

কত বছর পর দেখা, মামুন ভাইকে দেখে সে কিছুই বলল না, চুপচাপ—

অথচ কী যেন একটা বলবে মনে হয়েছিল তাকে। কি আর হয়ত বলত, ‘তোর ছোট ছেলেটার নাম কী রেখেছিস রে? একবার সামনে আনত, চুলগুলো কি তোর মেজ ছেলে জৌজির মতো কোকড়া কোকড়া হয়েছে?

যদিও মামুন ভাই দুইবার পেছন থেকে আব্বা বলে ডাকল, সেই ডাক শুনে আব্বা একবার পেছনেও তাকিয়ে ছিল—কিন্তু কিছু বলল না।

দরজার চৌকাঠে বসে আমাকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে আব্বা বলল কান্না থামা, এবার বাবা চলত আমার সঙ্গে, চল দেখি—

আমি চোখ মুছে আব্বার পেছন পেছন হাঁটতে লাগলাম কোনো প্রশ্ন না করেই, রিতার কী খবর রে? ওর ছেলেরা কেউ চিকিৎসক–প্রকৌশলী হইছে, সেতু হাঁটছে ইঞ্জিনিয়ার আব্বা। আর সগর? ও পিএইচডি করতেছে। আব্বা চোখ বড় বড় করে বলে বলিস কী!  রিতা মা আমার, মোবারক এখন আর মারধর করে না তো ওকে। না আব্বা দুলাভাই এখন সুখি মানুষ... আব্বা আর কিছু বলল না, চানখাঁরপুল গুলিস্তান মোড়ে দাঁড়াল। আচমকাই আব্বা বলল, তুই দাঁড়া আমি তোর জন্য এক সানকি হালিম নিয়ে আসি, দুজন মিলে হালিম খাব। আব্বা সেই যে হেঁটে গেল...কতগুলো বছর এভাবে করে আব্বার কবরটা আমার বুকের ওপর ঘুমের ঘোরে হাঁটছে তো হাঁটছে—আমি তার হিসাব রাখতে পারি না একবারও...