গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ভোগান্তির শেষ কোথায়

ফাইল ছবি

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সিট নিশ্চিত করা মানে সোনার হরিণ পাওয়া। লাখো পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী পারেন তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করতে। বাকিদের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। এর প্রধান কারণ ভর্তি–ইচ্ছুকের তুলনায় আসনসংখ্যা সীমিত। মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে সারা দেশে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আর্থিক সামর্থ্য থাকে না পরীক্ষার্থীদের। ফলে অনেক দরিদ্র মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্ল্যাটফর্মে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পান না। তবে গত বছর থেকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনের জন্য নেওয়া হয় এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। দেশের ২০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একটি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত হাসি ফুটিয়েছিল লাখো পরীক্ষার্থীর মুখে। তবে এই হাসি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি।

পরীক্ষা কমিটি শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় ভর্তি সম্পন্ন করতে যারপরনাই ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছিল ভর্তি–ইচ্ছুকদের। ভর্তি কমিটির এমন সিদ্ধান্তের কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীই ভর্তি করাতে পারেনি‌। আসন খালি রেখেই শুরু করেছিল ক্লাস কার্যক্রম। গুচ্ছ ভর্তি কমিটি স্বীকারও করেছিল তাদের ব্যর্থতা। তবে আশ্বাস দিয়েছিল, আগামী দিনে এ রকম হবে না। এটা ছিল ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গল্প।

এবার আসুন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কথা শুরু করি। গত ১৩ আগস্ট ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু কথা রাখেনি ভর্তি কমিটি। পূর্বঘোষিত সংক্ষিপ্ত (শর্ট) সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বললেও তা করা হয়নি। এতে শর্ট সিলেবাসের প্রস্তুতি নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে যায়। ভর্তি পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা আবেদন ফি হিসেবে নিলেও প্রশ্নপত্রের বাহ্যিক ধরন ছিল নিম্নমানের। এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে ছিল অসন্তোষ। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও শুরু করা যায়নি ভর্তিপ্রক্রিয়া। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

তবে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভর্তি কমিটির একাধিক মিটিং হয়। ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে একটি সুন্দর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু কমিটির সিদ্ধান্ত দেখে হতাশায় নিমজ্জিত হন সবাই।

আগে থেকে বলা হয়েছিল, একটি আবেদনের মাধ্যমে সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ ক্ষেত্রে নিজ ইউনিটের জন্য কেবল ৫০০ টাকা আবেদন ফি দিতে হবে। শুরুতে এমন কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তাতে অটল থাকতে পারেনি ভর্তি কমিটি। কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। এতে আবেদন প্রতি শিক্ষার্থীদের খরচ হবে ৫০০ টাকা। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গুনতে হবে ১১ হাজার টাকা। তারপর ভর্তিতে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে এই ব্যয় নির্বাহ করা অসম্ভব। ফলে ভালো ফল করেও ছিটকে যাবেন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। শুরুতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে শিক্ষার্থীরা একবারই আবেদন করবেন এবং আবেদনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পছন্দক্রম ঠিক করার সহজ প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছিল ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে। পরে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী সাবজেক্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করা হবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পৃথক আবেদন করতে বলায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে। রাষ্ট্রপতি ও শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব করতে ও আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতেই একটা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ২২টি গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখন সেই সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছেন না, বরং এখন শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। সবাই মানসিকভাবে অসুস্থ।

শিক্ষার্থীদের এসব অব্যক্ত আর্তনাদ শুনবে কে? কে করবে এর সমাধান? কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এক আবেদনের মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হোক।

লেখক: শাহ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, একজন গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী