সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে যাক দেশজুড়েই

ছবি: প্রথম আলো

শারদীয় দুর্গাপূজা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ এই পূজা অর্চনা করে চলেছে। উৎসবের এই আলো ছড়িয়ে পড়ে স্বাভাবিকভাবেই দেশের সব মানুষের কাছে। আনন্দ ভাগাভাগিতে ধর্ম–বর্ণ–গোত্রনির্বিশেষে মনস্তাত্ত্বিকভাবে মানুষ হওয়ায় কারও আপত্তি থাকে না। মানুষরূপী হায়নার দল বারবার কিছু অহেতুক দোহাই দিয়ে পূজাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বা করতে চায়। এদিকে পৃথিবীর কোনো ধর্মই হামলা বা অহিংসতাকে সমর্থন জানায় না এটা চিরন্তন সত্য। তবুও তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নেমে পড়ে এসব অধর্মের পথে। নষ্ট হয় সম্প্রীতি, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাংস্কৃতিক ভারসাম্য।

গত বছর পূজার সময় কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে সারা দেশে যে ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়। বিশেষ করে, নোয়াখালীতে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, সে আতঙ্ক থেকে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এখনো বের হতে পারেনি। ওই ঘটনার জেরে কয়েকজন নিরীহ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল।

দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে আয়োজন করতে এ বছর সরকার থেকে নিরাপত্তার নানা শর্ত দেওয়া হয়েছে পূজা উদ্‌যাপন কমিটিগুলোকে। পূজা উপলক্ষে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো অবশ্যই আশাজাগানিয়া। কিন্তু সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, হাজার বছর ধরে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে একে অপরের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলা আবহমান বাংলার সম্প্রীতির এই দেশে নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করতে এখন কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়। স্বার্থান্বেষী একটি মহল প্রতিবছরই ওত পেতে থাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই উৎসব আয়োজনকে ধুলিস্যাৎ করতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার পায়তারায় থাকে তারা।

এমতাবস্থায় স্থায়ী সমাধান আইনগতভাবে নেওয়ার আগে মনস্তাত্ত্বিকভাবে নেওয়া জরুরি। মানসিকতা না বদলালে আইনের মাধ্যমে প্রয়োগ খুব বেশি সম্ভবপর নয়। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বিষয়ে নানা কর্মসূচির বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বিশেষত ধর্মীয় শিক্ষাগুরুদের এসব ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেই হবে। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সম্প্রীতিময় কার্যকলাপ বাড়াতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক তথ্য বিশ্বাস করার আগে ভাবতে হবে শতবার, না হয় সহায়তা নিতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পাশাপাশি টেলিভিশন বা অন্যান্য বিজ্ঞাপনী মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করতে হবে। ধর্মীয় মূলভাবকে তথা সাম্যর বাণীকে তুলে ধরতে হবে সবার মধ্যে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আনয়ন ও বাঙালি সংস্কৃতির তীব্রতর বহিঃপ্রকাশে সবার সচেষ্টতা জরুরি।

জয় হোক বাঙালিত্বের ও বাঙালি সংস্কৃতির। সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বজুড়ে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হোক পরিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িক নরপশুদের বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলার সময় এখনই। শারদীয় শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা সব অসাম্প্রদায়িক বাঙালির তরে।
*লেখক: অনন্য প্রতীক রাউত, শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়