মাতারবাড়ী হবে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর সমুদ্রযাত্রার নতুন পথ: স্পিকার
বাংলাদেশের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে একটি সঠিক পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এটি প্রতিবেশী স্থলবেষ্টিত দেশগুলোরও সমুদ্রযাত্রার সুযোগ বয়ে আনবে।
গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর: মাতারবাড়ী, বঙ্গোপসাগরে নতুন দৃশ্যের সূচনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন। জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ সেমিনারের আয়োজন করে জাপানের সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের ওশান পলিসি রিসার্চ ইউনিট।
কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে ২০২০ সালে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। ইতিমধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দরের ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতার ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬ মিটার গভীরতার এই বন্দর মাদার ভেসেল ভেড়ার উপযোগী। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়া একটি অংশ উদ্বোধন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্পিকার বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি ঘটাবে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের অন্য স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর জন্যও এই বন্দর উপযোগী হবে। এটি এমন একটি গেটওয়ে, যা বাংলাদেশের মাধ্যমে নেপাল, ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকে সহজতর করবে।
বঙ্গোপসাগর হচ্ছে ভারত মহাসাগরের ‘গ্রেট মিডল বে’ অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই সাগর ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান ও ভারতের সেভেন সিস্টারের সমুদ্র যোগাযোগের দ্বারও উন্মুক্ত করবে মাতারবাড়ীর এই গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায়, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরটি সঠিক সময়ে, সঠিক ভৌগোলিক অবস্থানে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। এই অঞ্চলের সঙ্গে জাপান ও এর প্রতিবেশী দেশগুলোও মাতারবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজ করতে পারবে। সে কারণে বিশেষজ্ঞরা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, বলেন স্পিকার।
ওশান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হাইডে সাকাগুচি বলেন, ১৯৮০–এর দশকে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নতি করতে গিয়ে পরিবেশের বেশ খানিকটা ক্ষতি করেছিল। আর এখন বাংলাদেশ এসব বিষয়ে সতর্ক থেকেই এখনকার উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো নিচ্ছে। সমুদ্র যোগাযোগের ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগরের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেখানে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর অন্যতম। মাতারবাড়ীতে জাপানের বিনিয়োগ বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা ও গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব ঘোচাতে সাহায্য করবে। কলম্ব ও সিঙ্গাপুরের সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভরশীলতাও কমে আসবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি পোশাকশিল্পের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে এই বন্দর সহযোগিতা করবে। এই বন্দর জিডিপিতে অন্তত ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মূল গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কামরান রেজা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা এবং জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ তমোহিডে ইচিগুছি বক্তব্য দেন।