অনর্থের মূলে নয়, সুখ কিনতে প্রয়োজন হয় অর্থ
কেউ খাবার কিনে আনন্দ পায়, কেউ খাবার দান করে। কখনো কখনো ভ্যান, রিকশা, বাসে ৫-১০ টাকার জন্য তুমুল লড়াইয়ে নিমগ্ন, আবার কখনো সেই বাসে বসেই কারও মিনতি দেখে পুরো মানিব্যাগ খালি করতেও হয় না পিছপা।
কেউ টাকা দিয়ে জমি কেনে—বিঘার পর বিঘা। কেউ খুশি, তার সব জমি বিক্রির টাকা দিয়ে বাবার ভিটা আঁকড়ে ধরতে পারলে।
কারও জন্য মামলা জেতা শ্বাস নেওয়ার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। শেষ রক্তবিন্দু বাজি রেখে দেয় ভাইয়ের খুনের বদলা নিতে। বিলিয়ে দেয় মায়ের শেষ স্মৃতি নামক বালা জোড়াও।
কারও জন্য ঈদ ও শীত কেবল নতুন পোশাকেরই উৎসবমাত্র, পোশাক পরাতে নয়, কেনাতেই তাদের আনন্দ। কেউ শুধু তীব্র শীতে, শীত মেটাতে যথেষ্ট পোশাকেই, হাসে অনাবিল হাসি।
চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা কারও হৃদয়কে ব্যথিত করে না। ব্যথিত করে কারও শখ পূরণে অপূর্ণতা। ব্যক্তি নিজে এক বেলা খেয়ে দিন পার করতে পারে, পারে না করতে তার মেয়ের শখের বেলুন কেনাতে কার্প্যণতা।
ভোগে সুখ নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। কিন্তু সবাই ত্যাগের মাঝে সুখ খুঁজে পেলে দুনিয়ায় ভোগকৃত মানুষ কম পড়ত।
উইথ গ্রেট পাওয়ার, কামস গ্রেট রেসপনসিবলিটি, বাট গ্রেট পাওয়ার কামস উইথ গ্রেট মানি।
(পাওয়ার, টু বাই হ্যাপিনেস। দ্যাট মানি, টু বাই হ্যাপিনেস)
আমাদের চাওয়াগুলোও যেন কেমন!
ক্ষুধায় ধরেছে, চাই টাকা, খাবার চাই না। ক্ষুধা নিবারণ করতে কি টাকা প্রয়োজন নাকি খাবার?
নতুন পোশাক আমাদের খুশি দিতে দিতে ভুলেই গেছে, সেটি দেহের আবরণ দিতে প্রয়োজনীয়মাত্র, খুশি দিতে নয়। ভুলে গেছে তার ধর্ম, যা তাকে জন্ম দিয়েছিল।
জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষের কতটুকু জমির দরকার হয়? সাড়ে তিন হাত?
খাবার কি পেট ভরানোর জিনিস, নাকি আনন্দ দেওয়ার জিনিস।
গরিব, দুঃখী, অসহায়। যেন একই শব্দের তিনটি সমার্থক রূপ।
কেন ভাই? গরিব, সুখী, ক্ষমতাবান কি কখনো হতে পারে না?
কেসে কেন মানুষকে সর্বদা জিততে বা হারতে হয়? কেন কোনো সমঝোতার স্থান নেই?
কেন ভাইয়ের মৃত্যুর বদলাতে মায়ের শেষ চিহ্নও বিলীন হয়? যেখানে সব জীবের মৃত্যু অবধারিত।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
স্রষ্টার কাছে আমরা সুখ চাই, সুস্বাস্থ্য কখনোই কেন চাই না।
মোটকথা, মানুষের সম্পদ অর্জনের মূল পাথেয় হচ্ছে খুশি হওয়া, সুখে থাকা।
বন্ধুর কাছে যখন জিজ্ঞেস করলাম, ‘বন্ধু, ঘুম ভেঙে কোনো এক সকালে দেখলি তোর ঘরভর্তি অফুরন্ত টাকা। তখন কী করবি।’ বন্ধু কত সহজেই বলে দিল, ‘সুখ কিনব। অফুরন্ত টাকায় মিলবে অফুরন্ত সুখ।’
জগৎজুড়ে খালি চলছে সুখ–বাণিজ্য। যার যত সম্পদ, তার তত সুখ। যার যত সুখ, তার জীবন তত মসৃণ। সুখ কেনার সামর্থ্য তার তত বেশি।
মানি কান’ট বাই হ্যাপিনেস। রেদার দ্যান ইউ ইউজ মেনি অনলি টু বাই হ্যাপিনেস।
অর্থ হয়তো সবাইকে সমান সুখ দিতে পারে না। তবে তার সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। দিতেও পারে, না–ও পারে। কিন্তু অর্থহীন অবস্থা যে আপনাকে চিরকাল জগৎ দুঃখিনী করে রাখবে, এ কথায় কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক: রোকন বাপ্পি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ