করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। দেশের বর্তমান মাথাপিছু গড় আয় এখন ২০৬৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। লকডাউনসহ নানা সমস্যার কারণে সারা বিশ্বব্যাপী চরম মন্দাভাবের সময়েও বিদায়ী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৬ বছর। চলমান মুজিব বর্ষেই প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর হস্তান্তরের দ্বারা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প মুজিব বর্ষ উদ্যাপনকালে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলার ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে। করোনাকালেই দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প চলমান পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। খাদ্যে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। করোনায় আক্রান্তের হার এখন ৫ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। মৃত্যুহারও অনেকটাই কম। করোনার বহুল প্রত্যাশিত ভ্যাকসিনও শেষ পর্যন্ত দেশে চলে এসেছে।
দেশের যখন এত এত অগ্রগতি হচ্ছে, ওই সময়ে শুধু বন্ধ রয়েছে উপজেলাভিত্তিক নতুন সরকারি হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের আত্তীকরণের কাজ। আত্তীকরণের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অনেকটা এ রকমই। আমরা যতই বলছি যে প্রধানমন্ত্রীর এ বৃহৎ পদক্ষেপ পাঁচ বছর ধরে ঝুলে আছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বন্ধ থাকায় প্রশাসনিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষক–কর্মচারী সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও অবসরে গেছেন সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই। ২০১৮ সাল থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও বেতন–ভাতা না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর নন–এমপিও শিক্ষক–কর্মচারীরা করোনাকালে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েও বেসরকারি নিয়মে বেতন ও ফি দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোনো কিছুই যেন বুঝতে চাইছে না তারা। ভাব অনেকটা এ রকম, যে যা–ই বলুক না কেন আমরা কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছি না! তবে করোনা মহামারিতেও কোনো কোনো কর্মকর্তা শিক্ষকদের আত্তীকরণের কাজ ত্বরান্বিত করেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।
কিন্তু বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কলেজকে না ডাকায় শিক্ষক–কর্মচারীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। আগে কাজের গতি কম থাকলেও টুকটাক কাজ হওয়ার কারণে শিক্ষকেরা স্বস্তিতে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ জনপদের আপামর জনসাধারণের শিক্ষার মান উন্নয়নের যে মহতী উদ্যোগ নিয়ে সরকারীকরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা এখনো অধরাই থেকে গেছে।
এর অবসান কবে হবে? আমরা এর অবসান চাই। স্কুল–কলেজের অচলাবস্থার নিরসন চাই। শিক্ষার্থীদের সরকারি বেতনে পড়াশোনা করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন, এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। সর্বোপরি এ কাজে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
*লেখক: মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত), সরকারি কলেজ স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটি।