শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় চাই

পড়াশোনা হোক আনন্দের, তা যেন কখনোই তোমার ওপর চাপ হয়ে না দাঁড়ায়
প্রথম আলো ফাইল ছবি

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। একজন শিক্ষার্থীকে জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পাশাপাশি ভালোভাবে পড়ালেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে দেশের সেরা উচ্চ বিদ্যাপীঠে ভর্তি হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো একজন শিক্ষার্থীর কাছে স্বপ্নের মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে উচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ালেখা করে দেশসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করার মনোভাব নিয়ে সবাই নিজের মনের গভীরে এক স্বপ্নজাল ‌বুনে থাকে। কিন্তু নানা কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ না করে; শিক্ষার্থীবান্ধব না হয়ে উল্টো অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি অধিক মনোযোগ দিয়ে থাকে। আর যার ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে থাকে অনেক হতাশা ও যন্ত্রণা।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ছোটবেলা থেকেই অনেক স্বপ্ন থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে শুরু হয় অবিরাম পরিশ্রম। আর এই পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী পৌঁছে যায় তাঁর নিজস্ব গন্তব্যে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সেশনজট, আবাসন সংকট, ছাত্র অপরাজনীতিসহ নানা সংকটের মুখোমুখি হতে হয় একজন শিক্ষার্থীকে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়; পড়ালেখা করার পাশাপাশি মানসিক পেরেশানিতেও থাকতে হয়। একদিকে নিজের লক্ষ্যের প্রতি মনোযোগ রাখা; আর অপর দিকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে সামলিয়ে নিজেকে সঠিকভাবে গড়ে তোলাই একজন শিক্ষার্থীর কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। অনেকেই আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে এসে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন। ফলে সে তাঁর জীবনের প্রতি লক্ষ্যচ্যুত হয়ে পড়ে এবং পড়ালেখা শেষ করে একটি সার্টিফিকেট অর্জনের মধ্য দিয়েই খালি হাতে তাঁকে বাড়িতে ফিরতে হয়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তাঁর ছিল অনেক বড় হওয়ার ইচ্ছাশক্তি; অথচ শেষ পর্যন্ত সে নিজের জীবনের লক্ষ্য থেকে পথভ্রষ্ট হওয়ার পাশাপাশি তাঁর মা–বাবার স্বপ্নভঙ্গেরও অন্যতম কারণ হয়ে উঠল।

প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অব্যবস্থাপনার জন্য শিক্ষক সমাজের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়া এবং প্রশাসনের দুর্বলতাকে প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়ে থাকে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় উচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসেবে এবং শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের মাধ্যমে দেশের প্রধান সম্পদে পরিণত করার জন্য। আর যার কারণে নিয়োগ দেওয়া হয় শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিয়োগ লাভের পর থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রতি যতটুকু না নজর দিয়ে থাকেন, তার চেয়ে অধিক বেশি তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ানোর দিকে নজর দিয়ে থাকেন। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর সর্বশেষ প্রত্যক্ষভাবে এই পরিস্থিতির জন্য শিকার হন যাঁদের জন্য তৈরি হয় উচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো, সেই শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখান থেকেই তৈরি হয় দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যদি সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ না করে, তবে শিক্ষার্থীরা অনেকটা বঞ্চনার শিকার হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করে দেশসেবায় নিজেদের নিয়োজিত করবেন। ফলে তাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না–ও পাওয়া যেতে পারে। তাই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মাধ্যমে যাবতীয় শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন মানুষে পরিণত করার মাধ্যমে ভালোবাসার মূল কেন্দ্র হয়ে উঠবে—এই প্রত্যাশা সবার।

*লেখক: মো.রুবাইয়াদ ইসলাম, শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর