রংতুলিতে নির্ভর করেই বুটিক প্রতিষ্ঠান
শুরুটা হয়েছে আঁকিবুঁকি দিয়ে। রংতুলির ওপর নির্ভর করে একটি বুটিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেছেন। তাঁর নাম রোকসানা আলম শশী। স্বপ্নপূরণের পথ ধরেই হাঁটছেন এবং উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। কাজের মাধ্যম হিসেবে প্রাধান্য দিয়েছেন নিজের ভালো লাগার বিষয়কে। শিশু ও বড়দের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের জামা তৈরি করে সেই জামার জমিনে হাতে এঁকে ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন ছবি। তাঁর চিত্রকলার চিন্তন মাধ্যম গ্রামবাংলা, দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। সবুজ–শ্যামল রূপকে নিয়ে আসেন হাতের কাজে, উপস্থাপনের চেষ্টা করেন সহজ ও জীবন্ত আবহে। তাঁর তৈরি পোশাক এবং চারু ও কারুপণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে শাড়ির ওপর হাতে নকশা আঁকা শুরু করেন। কালামকারী নকশার ধারণাকে নিয়ে আসেন শাড়ির আঁচলে ও জমিনে। শুধু তা–ই নয়, শিশু ও বড়দের জামাতেও ফুটিয়ে তোলেন কালামকারী। সুই-সুতায় ফুলকারীর সঙ্গে কালামকারীর ধারণাকে উপস্থাপন শুরু করেন।
রোকসানা আলম নিজের পণ্যকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়েছেন প্রযুক্তির সহায়তা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘মেমসাহেব’ নামে একটি বাণিজ্যিক পেজ খুলেছেন। এই পেজের মাধ্যমে নিজের তৈরি পণ্যকে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রহকের দোরগোড়ায়। পাশাপাশি ফেসবুকে প্রচারও শুরু করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের পোশাক, গয়না ও শোপিস সম্পর্কে অনলাইনে প্রচারের পাশাপাশি অফলাইনেও বিক্রি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। পণ্যকে ভোক্তার নজরে আনার লক্ষ্য নিয়ে নিজেই হয়েছেন নিজের পণ্যের মডেল। হস্তশিল্প–সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ বাংলাদেশ হস্তশিল্প অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য হয়েছেন। যোগ দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সংগঠন উইমেন এন্টারপ্রেনার্স অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইবিডি) সঙ্গে। সম্প্রতি এই সংগঠন আয়োজিত নিজের পণ্যের নিজেই মডেল প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হন।
রোকসানা আলম নিজেই তাঁর প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনার। কাপড় কাটা, সেলাই ও নকশার কাজ নিজেই করেন। নকশায় যুক্ত করেছেন স্ক্রিন, ব্লক ও সুই-সুতার কাজ। এতে পুঁতি, ডলার ও কড়ির কাজের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। পোশাকে এনেছেন বচন ও কাব্যকথার ছাপ। তাঁর ফ্যাশন পণ্যে রয়েছে কুর্তি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শাড়ি, ব্লাউজ, ওড়না, টু–পিস, থ্রি–পিস। রয়েছে দেশীয় সংস্কৃতিক ঐতিহ্যমণ্ডিত গয়না ও শিশুতোষ নকশায় বাহারি পোশাক। আছে অ্যামবোস পেপারে অ্যাক্রেলিক পেইন্ট চিত্র, বিভিন্ন মাধ্যমে তৈরি ও ফ্রেমে বাঁধাই ছবি, সুপারি খোলের তৈজসে করা নকশা। কাপড়ে তোলা নকশায় এনেছেন প্রকৃতি, ফোক, বিমূর্ত, আফ্রিকান বোহেমিয়ান, বুদ্ধ এমনকি সাইন অব পিস। ফেভিক্রিল অ্যাক্রিলিক রঙে করেছেন ডেনিম আর্ট।
রোকসানা আলমের নিবাস সুনামগঞ্জে। এখানেই বড় হয়েছেন এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়ন করেছেন। অনলাইন মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি সুনামগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে পৌর মিনি মার্কেটে গড়ে তুলেছেন মেমসাহেব নামের একটি বুটিক আউটলেট।
উদ্যমী তরুণ উদ্যোক্তা রোকসানা আলম বলেন, ‘আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে ফ্যাশনের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই। আর কথাটি মাথায় রেখে কাজ করে চলেছি। সবার ভালোবাসাই আমার পাথেয়। আগামী দিনে যাতে দেশীয় ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ও নান্দনিক পণ্য আরও বেশি করে আনতে পারি, সেই দোয়া কামনা করি।’