১১ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম সিটির নবনির্বাচিত মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন। তিনি চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাটের ঐতিহ্যবাহী বহদ্দার বাড়ির সন্তান। নবনির্বাচিত এই মেয়রের সামনে জলাবদ্ধতা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও উন্নয়নে রয়েছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ। তবে চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দারা চান এখান থেকেই শুরু করা হোক উচ্ছেদ অভিযান।
বহদ্দারহাট ঘিরে বছরের পর বছর সড়ক, নালা ও ফুটপাতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও দখলের হিড়িক লেগে আছে। ফলে দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী এখানকার মানুষের। তবে এবার বদলে যাবে বহদ্দারহাটের দৃশ্য, এমন আশা মেয়রের এলাকার বাসিন্দাদের।
সড়ক ফুটপাত, খাল–নালায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার দায়িত্বে যে প্রতিষ্ঠান, তারাই বহদ্দারহাটে নালার ওপর একে একে গড়ে তুলেছেন ৭২টি দোকান। সিটি করপোরেশন মার্কেট হিসেবে পরিচিত এটি। এ ছাড়া বছর দুয়েক আগে কাঁচাবাজারের ভেতর মূল সড়কের ওপর ৮-১০টি দোকান নির্মাণ করা হয়। অনিয়ম–জালিয়াতির মাধ্যমে এসব দোকান জায়েজও করেছেন চসিকের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
২০১৪ সালে নগরীর শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট ডোমখালী খাল পর্যন্ত বক্স ড্রেন নির্মাণ করে চসিক। সেই সঙ্গে নালাগুলো প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিলে ভেঙে ফেলা হয় বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের পাশে চসিকের পুরোনো টিনশেডের কিছু দোকান। নালার কাজ শেষ হতেই তার ওপর গড়ে ওঠে ৩৫টি পাকা দোকান। এ নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হন তৎকালীন মেয়র এম মঞ্জুর আলম। সে সময় স্বপন বৈষ্ণব নামের এক মার্কেটমালিক উচ্চ আদালতে রিট করলে চসিককে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তবে সেই আদেশ তোয়াক্কা করেনি কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া নালা-খালের ওপর স্থাপনা নির্মাণ কোনোভাবে আইন সমর্থন করে না।
বহদ্দারহাটের চারটি মার্কেটের দোকানিদের অভিযোগ, চসিকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় দখলদার চক্রের যোগসাজশে নালার ওপর অবৈধভাবে এসব দোকান গড়ে উঠেছে। জানা যায়, প্রথমে অস্থায়ীভাবে টিনশেডের ১০-১৫টি দোকান ছিল এখানে। পরবর্তী সময়ে নালার ওপর স্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয় ৩৫টি দোকান। এতে শেষ নয়, নির্মাণ করা হয় দুই মুখী করে আরও ৩৫টি দোকান।
দীর্ঘ ছয় বছরেও উচ্ছেদ হয়নি নালার ওপর চসিকের এই মার্কেট। এতে আশপাশের চারটি মার্কেটের অন্তত ৫০০ দোকানি রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন। অগ্নিকাণ্ড কিংবা কোনো দুর্ঘটনা হলে, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকবে সেই সুযোগ পর্যন্ত নেই। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণেও ব্যাপক জলাবদ্ধতাও নিত্যসঙ্গী। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের মূল ভবন নির্মাণকালীন বাজারের মূল সড়কের ওপর ৮-১০টি দোকান নির্মাণ করা হয়। মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রিও করা হয় এসব দোকান। ফলে চলাচলের মূল সড়কটি এখন সরু হয়ে গেছে।
২০১৯ সালে বাজারের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রশস্ত গলি, আলো-বাতাস, চলাচলের যথেষ্ট সুবিধা থাকায় প্রথম দিকে ক্রেতার উপস্থিতি ভালো ছিল। কিছুদিন যেতে না যেতেই বাজারের ভেতর চলাচলের অলিগলিতে শতাধিক মাছের দোকান বসে। এতে বৈধ ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রি কমে ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বাজারের সামনে পার্কিং স্পেস রয়েছে। এটি দখল করে অন্তত ছয়-আটটি দোকান নির্মাণের তোড়জোড় চালাচ্ছে একটি চক্র।
শুধু কাঁচাবাজার নয়, ব্যস্ততম বহদ্দারহাট মোড় ঘিরে সড়ক ও ফুটপাত দখলে চলছে যেন প্রতিযোগিতা। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে কথিত ব্যক্তি এসব নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় পুলিশও মাসোয়ারা পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁচাবাজারের মুখ থেকে হক মার্কেট পর্যন্ত ফুটপাত ও সড়কে নিয়মিত শতাধিক দোকান বসে। কোটি টাকায় ফুটপাত নির্মাণ করা হলেও এর সুফল পথচারীরা পাচ্ছেন না। সূর্যের আলো যত কমতে থাকে, দোকানের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান হলেও পুনরায় তা দখলে চলে যায়। এমন চিত্র শুধু বহদ্দারহাটে নয়, নগরেজুড়ে।