পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা

সীমানা দিয়ে দেশ আর মানুষকে আলাদা করা গেলেও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আলাদা করা যায় না। তারই প্রমাণ কাঞ্চনজঙ্ঘা। সমতল ভূমির বসবাসরত মানুষের মধ্যে পাহাড় নিয়ে যে উচ্ছ্বাস থাকবে, এটা নতুন কিছু নয়।

পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা পঞ্চগড়ের মানুষের কাছে নতুন কিছু নয়। তারপরও সারা বছর অপেক্ষা থাকে শিল্পীর তুলিতে ক্যানভাসে আঁকা সকালের কাঁচা রোদ পড়ে চকচক করা এই অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য। শীত আসার আগে আগে উত্তর-পশ্চিম কোণে এই সুন্দরীর রূপ দেখতে পাওয়া যায় কমবেশি পঞ্চগড়ের সব জায়গা থেকেই। তবে সবচেয়ে ভালো দেখা যায় তেঁতুলিয়া উপজেলার যেকোনো জায়গা থেকেই।

কাঞ্চনজঙ্ঘা বাংলাদেশের কোনো অংশ না হলেও এই উত্তরের জনপদ যেন সব সময় একে নিজের করে নিয়েছে। চোখে দেখার পর ক্যামেরায় বন্দী করার নেশা দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে। প্রতিবারই শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটি ধরে রাখার চেষ্টা কোনো ট্রেন্ড নয়, একটা ভালোবাসা, নেশা। প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করা। নিজেকে আরও ছোট ভেবে সৃষ্টির সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়া। এ এক পরম তৃপ্তি, শুদ্ধতা। তাই প্রতিবারের মতো এবারও সেই সৌন্দর্য দৃশ্যমান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টানা ছয় দিন মধ্যরাতে শীতের আগমনী হিমেল হাওয়াকে পাত্তা না দিয়েই ছুটে বেড়িয়েছি তেঁতুলিয়ার আনাচকানাচ।

এশিয়ান হাইওয়েতে যেতে যেতে ঘুম ঘুম চোখে ভাসে ভারতের সীমান্তে নিয়ন আলো, একদিকে চাঁদের ঝলসানো মোহনীয় জ্যোৎস্না, মাঝেমধ্যে দুরন্ত বেগে পাশ কেটে যাওয়া একটি–দুটি গাড়ি, ওই দূরে কার্সিয়াং পাহাড়ের আলো দেখতে পাওয়া, কখনোবা গাড়ি থামিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে একটি-দুটি উল্কাপাত দেখার সঙ্গে ভোরের আলোয় চকচক করে ভেসে ওঠা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার লোভ! এর মধ্যে যে রোমাঞ্চ, টানটান উত্তেজনা, তা ভাষায় বলার মতো নয়।

চারদিকে আলো ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিমুহূর্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা তার রূপ বদলায়। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। একদিকে ক্যামেরায় ধারণ করা আর অন্যদিকে নিজ চোখে তাকিয়ে থেকে প্রেমিকার রং বদলের সৌন্দর্য দেখার মধ্যেই এই ছবি তুলে ফেলা।

*লেখক: আলোকচিত্রী ও সদস্য, পঞ্চগড় প্রথম আলো বন্ধুসভা। [email protected]