ড্যাডিকে স্মরণ
শুধু অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে নয়, নিজ দেশের গুণীজনদের সম্মানের মধ্য দিয়ে দেশ সত্যিকার অর্থে বড় হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর পাঠক সমাবেশে আলোকচিত্রশিল্পী ও গল্পকার গোলাম কাসেম ড্যাডির ২৪তম প্রয়াণ দিবসের প্রথম দিনের আলোচনায় এসব কথা বলেন তাঁরা।
ড্যাডিকে নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব ও ফটোফি একাডেমি অব ফাইন-আর্ট ফটোগ্রাফি। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, ‘অর্থবিত্ত বাড়লে আমরা অনেক সময় সেই দেশকে বড় বলে থাকি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোনো দেশ তার জ্ঞানে, সম্মানে বড় হয় নিজ দেশের গুণীজনদের সম্মান দেওয়ার মধ্য দিয়ে।’
গবেষক ও আলোকচিত্রী সাহাদাত পারভেজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শফি, কবি সাখাওয়াত টিপু, আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার, লেখক সিরাজুল হক, আলোকচিত্রী সুদীপ্ত সালাম ও ড্যাডির দৌহিত্র শাহীন আহমেদ। সাখাওয়াত টিপু বলেন, ‘গোলাম কাসেম ড্যাডিকে নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘ড্যাডিসমগ্র’ প্রকাশ করেছে পাঠক সমাবেশ। গবেষক সাহাদাত পারভেজ এই সমগ্রের মাধ্যমে অনালোকিত থাকা ড্যাডিকে আমাদের সামনে হাজির করেছেন। ড্যাডিকে চর্চার মধ্য দিয়ে দেশের আলোকচিত্রশিল্পী ও সাহিত্য মহল নতুন মাত্রা পাবে। বইটি সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক কাজ হয়ে আমাদের শিল্প-সাহিত্যচর্চায় অনন্য হয়ে থাকবে।’
বক্তারা বলেন, গোলাম কাসেম ড্যাডির হাত ধরে পূর্ব বাংলায় ফটোগ্রাফি শিক্ষাচর্চা শুরু হয়। বাংলা সাহিত্যেও তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। তিনি ১৯১৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফ্যানট্রি কোরের সদস্য হিসেবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং মহাযুদ্ধের অসংখ্য দুর্লভ স্থিরচিত্র ধারণ করেন। ১৯৪৮ সালে রাজশাহীর ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার হিসেবে অবসর গ্রহণের পর ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকার ৭৩ নম্বর ইন্দিরা রোডে ‘ট্রপিক্যাল ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি’ ও ১৯৬২ সালে ‘ক্যামেরা রিক্রিয়েশন ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ফটোগ্রাফি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। গল্প সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক পান। ১৯৮৮ সালে ‘ক্রিয়েটিভ ফটোগ্রাফার্স বাংলাদেশ’–এর আন্তর্জাতিক স্যালনে গোলাম কাসেম ড্যাডির নামে পদক প্রবর্তন করা হয়। ২০০৪ সালে তৃতীয় আন্তর্জাতিক ছবি মেলায় তাঁকে আজীবন সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। এ ছাড়া তিনি ১৯৮৬ সালে সিনেসিক ও চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটি পদক পান। তিনি বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফিক কাইউন্সিলের সম্মানিত ফেলো।
গোলাম কাসেম ড্যাডি ১৮৯৪ সালে সালের ৫ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি ১০৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
আয়োজকেরা জানান, আজ সোমবার বিকেল ৫টায় মাহমুদা-হান্নান মেমোরিয়াল লাইব্রেরিতে (ঠিকানা: ৩৬ দিলু রোড, ঢাকা) ‘ড্যাডির শিল্পকর্ম ও সাহিত্য সাধনা’ শিরোনামে আলোকচিত্রী সাহাদাত পারভেজের একক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানটি ফটোফির পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।