ক্লেদাক্ত হৃদয়ের বিষাদভরা বেলারুশ ‘রাঢ়াঙ’
‘রাঢ়াঙ’ একটি সাঁওতালি শব্দ, যার অর্থ দুর্গত মাদলের ধ্বনিতে জেগে ওঠার আহ্বান। ভারতীয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যারা প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ায়, তারা সাঁওতাল।
আদিবাসীদের ভূমি অধিকার লড়াইয়ে সাঁওতালদের অবদানের ওপর নির্মিত দর্শকপ্রিয় নাটক ‘রাঢ়াঙ’। গত রোববার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে আরণ্যক নাট্যদলের ৪৪তম প্রযোজনার এ নাটকের মঞ্চায়ন হয়।
নাটকে দেখা যায়, সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দরিদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিত্যদিনের হাসি–কান্নাজর্জর বনবাসী জীবনের সরল অথচ ক্লেদাক্ত হৃদয়ের বিষাদভরা বেলারুশের চিত্র।
জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে সভ্য সমাজের মানুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা সাঁওতালদের। বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থায় নিজেকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে প্রত্যেক সাঁওতাল প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে লিপ্ত। থানার দারোগা থেকে শুরু করে গ্রামের মাতবর, এমনকি অধিকার আদায়ে সচেষ্ট বিদ্রোহী তরুণেরাও অস্তিত্বসংকটে ভোগেন। অবশেষে জয় হয় বিপ্লবের তথা মানবতার।
আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, হাসি-কান্না, উচ্ছেদ, হত্যার মতো নির্মম চিত্র ও আদিবাসীদের ভূমির অধিকার নিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের গল্প।
নাটকে দেখতে পাওয়া যায় আলফ্রেড নামের এক সাঁওতালের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার কারণে কী করে মৃত্যু তাকে গ্রাস করে। এরই বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে নাটকে। ২০০০ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের নওগাঁয় আলফ্রেড সরেনের নেতৃত্বে নিজ ভূমির জন্য লড়াই ও আত্মত্যাগ সাঁওতালদের দীর্ঘ সংগ্রামের বিশাল উত্তরাধিকারকে মঞ্চে তুলে ধরার প্রয়াসই ‘রাঢ়াঙ’। সাঁওতালদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার, সংগীত, নৃত্যকলা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নাটকে অভিনয় করা কুশীলবেরা।
‘রাঢ়াঙ’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান, নিকিতা নন্দিনী, তমালিকা কর্মকার, জয়রাজ প্রমুখ। নাটকটি রচনা করেছেন মামুনুর রশীদ, নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।