এমপিও নীতিমালা ২০২১–এর আশা ও নিরাশার চিত্র

শিক্ষা মন্ত্রণালয়
ফাইল ছবি

গতকাল মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা সদ্য প্রকাশিত এমপিও নীতিমালা ২০২১–এর বরাত দিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা পাওয়ার খবর আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। নীতিমালার ১১ (৭) ধারার বিশ্লেষণে নাকি এ কথা বলা হয়েছে। খবরটি যদি সত্যি হয়, তাহলে শিক্ষকদের জন্য খুবই আনন্দের খবর।

কিন্তু সদ্য প্রকাশিত ‘এমপিও নীতিমালা ২০২১’ এর ১১(৭)(ঙ)–তে উল্লেখ আছে, শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন/বোনাসের নির্ধারিত অংশ/ উৎসব ভাতার নির্ধারিত অংশ/ বৈশাখী ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫/ সরকারের সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে অথবা সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে।

এখানে শতভাগ উৎসব ভাতার কথা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। উপরন্তু আমার কাছে পূর্বের ২৫ শতাংশের ইঙ্গিতই মনে হচ্ছে। হয়তো কর্তৃপক্ষের উচ্চ পর্যায় থেকে তাঁরা জেনেছেন। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের কে এর বিশ্লেষণ দিয়ে নিশ্চিত করেছেন, তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাগুলোর সংবাদ ছাপানো দরকার ছিল।

তবে এ নীতিমালায় শিক্ষকেরা একটি জায়গায় ভালো অবস্থানে রয়েছেন। যেমন আগের নীতিমালায় ৮ বছর পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে ৫: ২ অনুপাতে অর্থাৎ শতকরা ২৮.৫৭ শতাংশ হারে পদোন্নতি পেলেও বর্তমান নীতিমালায় তা ৫০ শতাংশ হারে নির্ধারিত হয়েছে। এটি খুবই আনন্দের খবর।

কিন্তু এ নীতিমালায় শিক্ষকেরা ৪টি জায়গায় স্পষ্টত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। যেমন আগের নীতিমালায় উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ উভয় ক্ষেত্রে শিক্ষকেরা প্রভাষক থেকে ৫: ২ অনুপাতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলেও বর্তমান নীতিমালা অনুসারে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের কেউ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন না। শতকরা ৫০ শতাংশ হারে তাঁরা হবেন সিনিয়র প্রভাষক।

এমপিও নীতিমালা ২০১০–এর একটি সংশোধিত পরিপত্র প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ। এ পরিপত্রের ১১.৪ ধারায় বলা হয়, এমপিওভুক্ত প্রভাষকেরা প্রভাষক পদে এমপিওভুক্তির ৮ বছর পূর্তিতে ৫: ২ অনুপাতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। তাতে মোট পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না। তবে শর্ত থাকে যে নিয়োগকালীন তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রভাষকেরা এর সুবিধা পাবেন। অন্যান্য প্রভাষকেরা শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার ৮ বছর পূর্তিতে একটি সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত হবেন (৯ম থেকে ৭ম)। অর্থাৎ বাকি শিক্ষকেরা ৮ বছর পূর্তিতে সবাই সিনিয়র প্রভাষক স্কেল পেতেন। এখন কেউ সহকারী অধ্যাপকও হতে পারবেন না আবার সিনিয়র প্রভাষক স্কেল পাবেন মোট শিক্ষকের অর্ধেক। এটি অনেক বড় একটি ক্ষতির জায়গা।

শিক্ষকদের আরেকটি ক্ষতির জায়গা হলো, সহযোগী অধ্যাপক পদের ক্ষেত্রে। ২০১৩ সালের একই পরিপত্রের ১১.৫ ধারায় বলা হয়, সহকারী অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে ৩: ১ অনুপাত অনুযায়ী, সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। তবে তাতে মোট পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না। কিন্তু বর্তমান নীতিমালায় সহযোগী অধ্যাপক পদের কোনো কথাই উল্লেখ নেই।

তৃতীয় ক্ষতির জায়গা হলো ডিগ্রি স্তরের ৩য় শিক্ষকের পদের ক্ষেত্রে। ডিগ্রি স্তর চালু থাকলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১ জন এবং ডিগ্রি স্তরে ২ জনসহ মোট তিনটি পদে নিয়োগ দেওয়ার বিধান থাকলে কয়েক দশক ধরে ৩য় শিক্ষকের পদটি এমপিওভুক্তির বাইরে রয়ে গেছে। এবারের সংশোধিত নীতিমালায় পদটিকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনার কথা থাকলেও আনা হয়নি। এসব নিয়ে শিক্ষকেরা খুবই মর্মাহত।

চতুর্থ ক্ষতির জায়গা হলো অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বিনা বেতনে অথবা অনেকটা নামমাত্র বেতনে তাঁরা চাকরি করে দেশের উচ্চশিক্ষায় অবদান রেখে চলেছেন। এবারের সংশোধিত নীতিমালায় তাঁরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন এমপিওভুক্ত হবেন। কিন্ত নতুন এ নীতিমালায় ঠাঁই হলো না তাঁদেরও।

সর্বোপরি শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দিন দিন বাড়ার কথা থাকলেও দশ বছর আগে যে সুযোগ-সুবিধা ছিল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাদীক্ষায় ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে উচ্চিবদ্যালয় ও একটি করে কলেজ সরকারীকরণ গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর একটি বিশেষ উপহার। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০টি কমিটি গঠন করে কলেজগুলোর আত্তীকরণের কাজ সম্পাদন করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্য সব জায়গায় দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করে শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা রাখছি। সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের এ হাত আরও প্রসারিত হবে বলেই প্রত্যাশা।
*লেখক: মো. শরীফ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত), সরকারি কলেজ স্বাধীনতা শিক্ষক সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটি