বেকারেরা কেন রাজস্ব আহরণের উৎস হবেন

বর্তমান যুগে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সভ্য দেশই নিজেদের কল্যাণ রাষ্ট্র (Welfare State) হিসেবে প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত। যেকোনো মানুষই চাইবে নাগরিক হিসেবে সে যেন কোনো কল্যাণ রাষ্ট্রেরই নাগরিক হয়। কল্যাণ রাষ্ট্র তার নাগরিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে। বাংলাদেশও নিজেকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বর্তমানে বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ভিজিএফ; হিজড়া, হরিজন, বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন ইত্যাদি কর্মসূচি চালু রয়েছে এবং এর সুফলও নাগরিকদের একটি বিরাট অংশ ভোগ করছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে যে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চাকরিপ্রত্যাশীদেরকে রাজস্ব আহরণের উৎস বানিয়ে ফেলেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষার ফির নামে বেকারদের কাছ থেকে অনেকটা খয়রাতির মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করছে। কিন্তু প্রার্থীরা কেন রাজস্ব আহরণের উৎস হবেন? গত দেড় মাসের সার্কুলার পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে কারও কারও ক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষার ফিই দিতে হবে ৩০০০-৫০০০ টাকা। প্রথম শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৫০০-৭০০ টাকা সর্বনিম্ন ফি, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ১০০০-১২০০ টাকাও লাগে।অথচ একজন প্রার্থীর পেছনে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের গড়ে সর্বোচ্চ ১০০-১৫০ টাকা খরচ পড়তে পারে। বাকি টাকা কোষাগারে জমা হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় ওই সব প্রতিষ্ঠান জানেই না যে ওই টাকার মধ্যে লেগে আছে বেকারদের একবুক ঘৃণা আর ধিক্কার। করোনার এই সময়ে যখন অনেকের টিউশনি বন্ধ, পরিবারের আয় সীমিত হয়ে পড়েছে, ঠিক সে সময়ে সবার পক্ষে এত উচ্চ ফি দিয়ে আবেদন করাই সম্ভব হবে না। রাষ্ট্র বেকার ভাতা প্রদান না করুক, তবু এসব নিয়োগ পরীক্ষার ফি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসুক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এসব দেখার যেন কেউ নেই। আর এভাবেই আমরা বেকারদের রাজস্ব আহরণের উৎস বানিয়ে কল্যাণ রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে যাচ্ছি।


*লেখক: আবু সালেহ মো. আরিফ, সাবেক শিক্ষার্থী, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়